বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যাত্রীসেবার মান আরো বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য নতুন কেনা ড্যাশ-৮কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ ‘আকাশতরী’ ও ‘শ্বেতবলাকা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যখন সারা বিশ্বে ঘোরে, বিদেশে যখন যায় তখন বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করে। সেজন্য সব সময় আমাদের প্রচেষ্টা ছিল যে এই বিমান যেন ভালোভাবে, সুন্দরভাবে আমরা গড়তে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের যাত্রীসেবাটা আরও উন্নত করতে হবে। ২১টি জাহাজ আছে, সেগুলো যেন সুন্দরভাবে সুরক্ষিত থাকে। যাত্রীসেবার মান যেন উন্নত হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আপনাদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে আমি অনুরোধ করবো- এটা আমাদের দেশ, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি। এদেশের ভাবমূর্তি আমাদের উজ্জ্বল করা সবারই দায়িত্ব, কর্তব্য।
‘আমাদের যাত্রীসেবা যত উন্নত করতে পারবো তত দেশের লাভ হবে, দেশের মানুষের লাভ হবে। আমাদের দেশটাও আরও উন্নত হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। সেটাই আমি চাই। ’বিমানের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, হজযাত্রীরা যখন যান, আগে বাইরে থেকে প্লেন নিয়ে আসতে হতো। এখন আমরা আমাদের নিজস্ব প্লেনেই হাজিদের খুব ভালোভাবে পাঠাতে পারি এবং ফেরত আনতে পারি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক টার্মিনালের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হযরত শাহজালাল দ্বিতীয় টার্মিনাল, অত্যন্ত আধুনিক টার্মিনাল আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি। যাতে প্লেনসেবাটা আরও উন্নত মানের হয়।
আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আসার পর রাজশাহী বিমানবন্দর, বরিশাল বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর সবই প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিল। আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আবার সেগুলো চালু করি। সরকার সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নতি করছে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী, বরিশাল সবগুলো বিমানবন্দর যেমন চালু করা হয়েছে পাশাপাশি কক্সবাজার বিমানবন্দরকে উন্নত ও আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়াররুটে কক্সবাজার বিমানবন্দর খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া সবশেষ দু’টি উড়োজাহাজ হলো অত্যাধুনিক ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের দুই প্লেন ‘আকাশতরী’ ও ‘শ্বেতবলাকা’। এই দু’টি যুক্ত হওয়ার ফলে বিমানের প্লেনের সংখ্যা দাঁড়ালো ২১টি। যা বাংলাদেশের কোনো এয়ারলাইন্সের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ও কানাডা সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে কেনা তিনটি উড়োজাহাজের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বিমানের অন্য উড়োজাহাজের মতো এই উড়োজাহাজ দু’টিরও নাম রাখেন।
কানাডার বিখ্যাত এয়ারক্রাফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডি হ্যাভিল্যান্ড নির্মিত অত্যাধুনিক ৭৪ আসন সম্বলিত নতুন ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ। ড্যাশ-৮ প্লেনটি খুব ছোট রানওয়ে থেকে উড্ডয়নে সক্ষম ও স্বল্প খরচে নিরবচ্ছিন্ন ও মসৃণ উড্ডয়নের জন্য বিখ্যাত। এই মডেলের বিমানগুলোতে কেবিন নয়েজ সাপ্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্লেন দু’টি উদ্বোধন উপলক্ষে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি ভবনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব এম মোকাম্মেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামালসহ মন্ত্রণালয় ও বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।