কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো থেকে ১৩ দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে যাচ্ছে ১ম ধাপে ২১ টি বাসে করে ১০৯৬ রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু উখিয়া ডিগ্রি কলেজের ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে উখিয়া ত্যাগ করেছে ২১ টি বাসে।বিকালে আরেকটি রোহিঙ্গা দল উখিয়া ত্যাগ করার কথা রয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজুওয়ান হায়াত।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের পথে রওনা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের গাড়ি বহর।এসময় এম্বুলেন্স আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি সঙ্গে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের দুপুরে খাদ্য ও ঔষধ পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভাসানচরে উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের একটি দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১০৯৬ জন রোহিঙ্গা ট্রানজিট ক্যাম্প ত্যাগ করেছেন। মূলত তারা চট্টগ্রামে রাতে পৌঁছবেন। পরের দিন সকালে সেখান থেকে ভাসানচরে পৌঁছানো কথা রয়েছে। জানা গেছে, ২০টি মিনি বাসে করে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা ও তাদের মালামাল নিয়ে আসা হয় সোমবার রাতে ও রোববার সকালে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠের ট্রানজিট পয়েন্টে।জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ও সরকারের মধ্যে ভাসানচরে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হওয়ার পর তৃতীয় বারের মতো সেখানে রোহিঙ্গাদের নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
১৩ তম দফায় দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রোহিঙ্গাদের ১টি দল উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছে উল্লেখ করে অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসু দ্দৌজা নয়ন জানান, ১৩ দফায় ১ম ধাপে রোহিঙ্গাদের ১টি দল উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেন।বিকালে আরও একটি দল যাওয়ার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ জালাল আহম্মদ ও মোহাম্মদ হোসন জানান, ক্যাম্পে সহিংস ঘটনার কারণে আতঙ্কিত উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের লম্বাশিয়া, বালুখালী, মধুরছড়া, তাজনিমার খোলা ও জামতলীসহ বিভিন্ন শিবিরের অনেকে ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছেন, যারা আগে সেখানে যেতে চাননি।রোহিঙ্গারা স্ব-ইচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছে সে আরও জানায়,সম্প্রতি ১০ টি দেশের রাষ্ট্রদূত ভাসানচর এলাকা পরিদর্শন করায় রোহিঙ্গাদের মাঝে আরও উৎসাহ যোগাচ্ছে।
এদিকে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১২তম দফায় ২৬ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে সরকার ভাসানচরে পাঠায়।২১ মার্চ সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে মালেশিয়া যাওয়ার পথে উদ্ধার হওয়া ১৪৯ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া গত বছর মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টের পর মিয়ানমারের সেনাদের অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। এদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের সময়ে পালিয়ে এসেছিলেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।