করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহতার জন্য অন্যান্য মিউটিশন (পর্যায়ক্রমে রুপান্তর) এর সাথে ‘টি-১৯আর’ মিউটিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে এই ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে ঠিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো উৎপাদন করার সুযোগ পেয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সিঙ্গাপুরের নাগরিক অণুবিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। তিনি বলেন, জিংকের সমন্বয়ে তৈরি ভিটামিন সি গ্রহণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধ করা সম্ভব।
শনিবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক ওয়েবিনারে তিনি এই দাবি করেন।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানুর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. বিজন কুমার শীল। বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জুমে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভাইরোলজিস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, পিএইচসি’র সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন, বিএসএমএমইউ’র ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, আইইডিসিআর উপদেষ্টা ডা. মোস্তফা হোসেন, প্রধান স্বাস্থ্য বাতায়ন ডা. নিজাম উদ্দীন আহমেদ, উপস্থিত ছিলেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. এস. তাসাদ্দেক আহমেদ, উপাধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার, গণস্বাস্থ্যের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা প্রমুখ।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ডেল্টা ভাইরাসের সাথে ফ্লু ভাইরাসের যথেষ্ট মিল রয়েছে এবং এটি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়ায়। ফলে পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে বাকি সবাই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ভাইরাসের ভয়াবহতা রোধে কেউ একজন আক্রান্ত হলে তার নিকটজন সবাইকে পরীক্ষা করতে হবে, হাচিঁ কাশি দেয়ার সময় অবশ্যই কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।
নিয়মিত মাস্ক পরিধান এবং ভ্যাকসিন গ্রহণের কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ডেল্টা ভাইরাসের চিকিৎসার মতো ড্রাগস বিশ্ববাজারে বিদ্যমান আছে। এছাড়া জিংকের সমন্বয়ে তৈরি ভিটামিন সি গ্রহণ ডেল্টা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এ ধরনের ভিটামিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে অনুমোদন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য আমি আগেও প্রস্তাব করেছি, আবারো করছি। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আছেন, অধ্যপক এ কে আজাদ চৌধুরী আছেন, বিজন কুমার শীল আছেন। আরো যারা দুই-চার জন যারা আছেন, তাদের নিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি হবে। বক্তৃতা না দিয়ে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়া দরকার। এই একটা কাজ করলেও প্রধানমন্ত্রী স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ডিকোটিং করেছেন। এটার জন্য অনেক বেশি গবেষণার দরকার। আজ চীন একশ কোটি টিকা তৈরি করে বিক্রি করবে। ৬ মাসেরও আগে আমাদের এখানে চীন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে চেয়েছিল কিন্তু সেটা হয়নি। ভ্যাকসিন তৈরি নিউক্লিয়াস সায়েন্সের ব্যাপার না। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, এখানে বিনিয়োগের প্রয়োজন। আজ রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়ে কিউবা ও ইরান ভ্যাকসিন তৈরি করছে। দেড় বছর আগে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম। আমাদের কথা শোনেন নাই। দেশের সকল নাগরিককে আপনি ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কে আওয়ামী লীগ করে, কে বিএনপি করে তা আপনার বিবেচ্য না।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, একটা ভ্যাকসিন তৈরি করতে আধা ডলারের বেশি খরচ হয় না। তার জন্য ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। দেশে অনেক ব্যবসায়ী আছেন, পরিমনির জন্য যারা বিনিয়োগ করে থাকেন, তারা ইচ্ছা করলে ৭ দিনের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা জোগাড় করে দিতে পারেন। এতদিন যারা দেশ শোষণ করেছেন তারা ভালো একটা কাজ করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত ছয় মাসের মধ্যে আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করা। কিউবা যেমন ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, ইরান যেমন ভ্যাকসিন তৈরি করেছে তেমনি বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে রাশিয়া আমাদের সহযোগিতা করবে। আমরাই কিউবার মত ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবো, তখন এর দাম পড়বে আধা ডলার।