বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ভুয়া এনআইডি বানিয়ে কাজ করানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের দিয়ে

কক্সবাজার থেকে ফিরে আখতারুজ্জামান:
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২
  • ৩৫৩ পাঠক পড়েছে

ভুয়া এনআইডি বানিয়ে কাজ করানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের দিয়ে
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বাঘখালী রেঞ্জে বাস্তবায়নাধীন সুফল প্রকল্পে চলছে হরিলুট

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বাঘখালী রেঞ্জে সুফল প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত অর্থবছরে ৫০০ হেক্টর বাগান করার কথা থাকলেও প্রায় ১০০ হেক্টরে কোন বাগান না করেই বরাদ্দকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার সরোয়ার জাহান। চলতি অর্থবছরেও ১৩শ হেক্টর বাগান করার কথা রয়েছে। বর্তমানে সেখানে সবেমাত্র চারা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

আগামী বর্ষা মৌসুমে গাছ লাগানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে চারা তৈরীর কাজেও ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। দিনমজুর দিয়ে কাজ করানোর ক্ষেত্রে ও জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটলেও দেখার কেউ নেই। রোহিঙ্গা লেবারদের দিয়ে কাজ করিয়ে তাদেরকে দৈনিক ১৫০/ ২০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে মাস্টাররোলে ৫/৬শ টাকা হারে তুলে এই বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাত প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাবার নিয়ম না থাকলেও বিভিন্ন রোহিঙ্গা নেতাদের মাধ্যমে শত শত রোহিঙ্গাকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্যাম্প থেকে বের করে এনে তাদেরকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এ সকল লেবারদের দিয়ে মাটি কাটা, ব্যাগে মাটি ভরা ও ব্যাগে বীজ দেয়ার কাজ করানো হয়।

প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক বাগান করার সময় লেবার ডাটাবেজ করা হয়। সে মোতাবেক সারাবছর এ সকল দিনমজুর/লেবাররা কাজ করবে। পাশাপাশি এ সকল লেবারদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড সংরক্ষণসহ মাস্টার রোলে সই/স্বাক্ষর রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা লেবারদের কোন এনআইডি না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ফরেস্টার সরোয়ার জাহান তার নিজের ল্যাপটপে ভুয়া এনআইডি নাম্বার ও নাম ঠিকানা বসিয়ে প্রিন্ট করে সরকারি ফাইলে সংরক্ষিত করে আসছেন। মাষ্টার রোলে উল্লেখিত লেবারদের নাম ঠিকানা ও এনআইডি কার্ডের নাম্বারগুলো ওয়েবসাইটে পরীক্ষা করলে শতভাগ গরমিল পরিলক্ষিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সূত্রমতে লেবার প্রতি গড়ে ৪০০ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে।

এভাবে প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। অপরদিকে এই রেঞ্জের অধীন বিভিন্ন এলাকায় গত অর্থবছরে যে বাগান করা হয়েছে তা পরিমাপ করলেও দেখা যাবে কমপক্ষে ১০০ হেক্টরে কোন বাগানই হয়নি। যে অংশে বাগান দেখানো হয়েছে সেখানেও টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের দিকনির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে। বনায়নে জৈব সার রাসায়নিক সার ও প্রতিটি গাছের সাথে খুটি লাগানোর নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বনায়নের চিকরাশি, গামার, আকাশমনি, চাতিয়া, বকাইন, করই, শিমুল, বহেরা, অর্জুন গাছ লাগানোর নির্দেশনা থাকলেও তা যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি।

অপরদিকে ৬ফুট অন্তর চারা রোপনের কথা থাকলেও একেকটি চারার দূরত্ব করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ ফুট। চারা রোপণের পূর্বে গোবর সার ও রাসায়নিক সার দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। আর এ কারণেই গত অর্থবছর করা বাগানের প্রায় ৩০ শতাংশ চারা ইতিমধ্যে মারা গেছে। তাছাড়া বাগানের সম্মুখভাগের বাগান কিছুটা নিয়মমাফিক হলেও ভেতরে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাগান পরিদর্শনে গেলে সম্মুখভাগের বাগান দেখেই চলে আসেন। বিভিন্ন পোকামাকড় ও কাদা পানি থাকায় তারা ভিতরে ঢুকতে চান না।

আর এই সুযোগটাই বাগান তৈরীর কাজে নিয়োজিতরা নিয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার সরোয়ার জাহানের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি জানান আমি যা কিছুই করেছি ডিএফও সবকিছুই অবগত আছেন। উল্লেখ্য কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সকল প্রকার অনৈতিক লেনদেন এই ফরেস্টারের মাধ্যমেই হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে অভিযোগ রয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এই রেঞ্জের বাস্তবায়নাধীন সুফল বাগানের প্রকৃতি চিত্র ও রোহিঙ্গাদের ভুয়া এনআইডি বানিয়ে তাদেরকে দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি অবিলম্বে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580