রাজধানীর মগবাজারে একটি ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে সাত জন নিহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এ ঘটনায় আহত ও দগ্ধ হয়েছেন অর্ধশতাধিক। তাদের মধ্যে ২৯ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ১০ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
বাকিদের মগবাজারের আশপাশে কয়েকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের বেশির ভাগই পথচারী বলে জানা গেছে।
রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বড় মগবাজার এলাকার আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর ভবনে এই বিস্ফোরণ ঘটে। কীভাবে সেখানে বিস্ফোরণ হলো তাৎক্ষণিক তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম রাত ১১টার দিকে বলেন, ’মগবাজারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাত জন মারা গেছেন। আমরা ধারণা করছি, ভবনের নিচে যে শর্মা হাউজ ছিল, সেখানে জমে থাকা গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।’
ফায়ার সার্ভিসের রমনা স্টেশনের স্টেশন অফিসার ফয়সালুর রহমান এর আগে জানান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে বিস্ফোরণের কথা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও ঠিক কোথায় থেকে বিস্ফোরণ ঘটলো তা তাৎক্ষণি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিস্ফোরণের পর পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের উদ্ধার কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালায়। ওই ঘটনার পর পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বিস্ফোরণ যে ভবনে হয়েছে চার তলা সেই ভবনের প্রথম দুই তলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উপরের দুই তলার বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির নিচের তলা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। প্রথমতলার ছাদও ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণে আশপাশের অন্তত ৩০০ গজের মধ্যে থাকা ভবনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ভবনের উল্টে পাশে রাস্তা পার হয়ে একটি বহুতল ভবন। সেখানে আড়ং বিক্রয় কেন্দ্র। ওই ভবনটির ৫তলা পর্যন্ত জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। পাশের ‘বিশাল সেন্টার’ নামের একটি শপিংমলের কাঁচও ভাঙা দেখা গেছে। রাস্তায় আটকে থাকা বাস ও গাড়ির কাঁচ ভেঙে চুরমার অবস্থায় দেখা গেছে।
পথচারী জান্নাত আরাসহ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তারা ঘটনাস্থলের অদূরে একটি ভবনে নীচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময় বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। তারা যে ভবনের নিচে ছিলেন, বিস্ফোরণের সময় সেটির কিছু পলেস্তারা ধসে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ওপর পড়ে। এরপর ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন উড়ালসড়কের ওপরে ও নিচে যাত্রীবাহী বাসে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাসেল শিকদার সমকালকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা বড় মগবাজারে একটি ভবনে বিকট শব্দে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায় বলে খবর পান। এরপর ঘটনাস্থলে ১৩টি ইউনিট পাঠানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধণ বলেন, ভবনটির নিচততলায় শর্মা হাউজ ও বেঙ্গল মিট নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল। দোতলায় সিঙ্গারের শো-রুম ছিল। সেখানে ফ্রিজসহ নানা ইলেকট্রিক পণ্য বিক্রি হতো। বিস্ফোরণের পর শো-রুমটির প্রায় সব পণ্য লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে নাকি অন্য কিছু থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে তা তদন্তের পর বলা যাবে।