বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

মমতার দলে পদত্যাগের হিড়িক, নেপথ্যে লোভ না কর্তৃত্ব?

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৪০৪ পাঠক পড়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসে পদত্যাগের ঝড়। কয়েক মাস ধরেই ভাঙন চলছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক শিবিরে। শুভেন্দু অধিকারী থেকে শীলভদ্র দত্ত- জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মের পতাকাতলে যোগ দিচ্ছেন শাসক দলের একের পর এক বিধায়ক, সংসদ সদস্য, নেতা। গত বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সঙ্গে ২২ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেন শুভেন্দু। এর আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল আগে থেকেই। গত ২৭ নভেম্বর মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাকালীন এ নেতা। গত বুধবার বিধায়কের পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন তিনি।বৃহস্পতিবার সরে গেলেন দল থেকেই।

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে জোড় ছিড়তেই তৃণমূলে শুরু হয় দলছাড়ার প্রতিযোগিতা। তার অনুসারীরাও একই পথ ধরবেন তা আন্দাজ করাই যাচ্ছিল। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তার সঙ্গে আরও ১০ বিধায়ক তৃণমূল ছাড়বেন। ইতোমধ্যে সেই স্রোত শুরুও হয়েছে। ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত ছাড়াও শুক্রবার দল ছেড়েছেন পুরুলিয়ায় দুই তৃণমূল নেতা। পদত্যাগ করেছেন রঘুনাথপুর পৌরসভার সাবেক প্রধান, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ভবেশ চট্টোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সাবেক সভাপতি সৃষ্টিধর মাহাতের ছেলে সুদীপ মাহাত, পশ্চিম মেদিনীপুরের বর্ষীয়ান নেতা প্রণব বসু।

পদত্যাগ করেছেন বীরভূমের সিউড়ি এক নম্বর ব্লকের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি করম হোসেন খান। শুভেন্দু অধিকারীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত আরও কয়েকজন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ এবং নেতার তৃণমূল ছাড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। দলত্যাগীদের এ তালিকা লম্বা হচ্ছে ক্রমাগত। কিন্তু কেন? হঠাৎ কী এমন হলো যে দল বেঁধে পদত্যাগ করতে হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের? প্রণব বসু দীর্ঘদিন মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। এর মেয়াদ শেষ হলে তাকেই পৌরসভা প্রশাসকের পদে বসায় তৃণমূল। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী বেসুরো হতেই গত ১৮ নভেম্বর প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় প্রণবকে। তখন থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তার। ডিসেম্বরের শুরুতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মেন্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেন প্রণব বসু। ফলে তার চূড়ান্ত দলত্যাগ নিয়ে জল্পনা ছিল আগে থেকেই। এখন শুভেন্দুর সঙ্গে তিনিও অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন।

নিজের দল ছাড়ার কারণ হিসেবে প্রণব সরাসরি মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেছেন। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, পিসি-ভাইপো যেভাবে দল চালাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা যায় না। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সে কারণেই তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উত্তর চব্বিশপরগনার প্রভাবশালী নেতা ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টারও দলের বিরুদ্ধে বেঁকে বসেছেন। শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন তিনি। বাবু মাস্টারের অভিযোগ, তৃণমূলের জেলা পরিষদে এক প্রভাবশালী নেতার নির্দেশেই সবকিছু চলছে। সেখানে সম্মানের সঙ্গে কাজ করা যাচ্ছে না। এ কারণে দল ছেড়েছেন তিনি।

শনিবার মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন করম হোসেন খান। তিনি সিউড়ি ১নং পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণী কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। শুক্রবারই জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে মেদিনীপুরের পথ ধরেছেন এ নেতা।

হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন? উত্তরে করমের অভিযোগ, যাদের কাঁধে ভর করে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল, এখন তাদেরই ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। তার কথায়, তাবেদার ও তেলবাজদের দলে পরিণত হয়েছে তৃণমূল। সেখানে কাজ করার পরিবেশ নেই। এ কারণে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। সুদীপ মাহাতের দাবি, তৃণমূল নেতাদের একাংশের অহংকার ও ঔদ্ধত্যের জন্য দল ছেড়েছেন তিনি। এখন যারা আধিপত্য দেখাচ্ছেন, তারা তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে দলে ঢুকেছেন।

পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পৌরসভার সাবেক প্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, কারাগারে বন্দির মতো থাকতে হচ্ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দল করেছিলাম। এখন সেটা কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তাই আর থাকা সম্ভব হলো না।

ভবেশ এখানে কোম্পানি বলতে ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোর ওরফে পিকে’র টিমকে বুঝিয়েছেন। পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট অর্থাৎ রাজনৈতিক কৌশল রচয়িতা পিকে যেখানে গেছেন, যার সঙ্গে থেকেছেন, তিনিই ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন। নিজে অন্তরালে থেকে নিয়োগকর্তাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়াই তার কাজ। গুজরাট, বিহার, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ হয়ে এবার প্রশান্তের গন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যে দলের বিপর্যয় ঠেকিয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেতার লক্ষ্যে সম্প্রতি পিকে’র সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এ নিয়েই আপত্তি অনেকের। প্রশান্ত কিশোরের কৌশলের সঙ্গে একমত হতে না পেরে তার প্রতিষ্ঠান আইপ্যাক-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক নেতা।

দলত্যাগী বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের অভিযোগ, একটা করপোরেট প্রতিষ্ঠান বলে দিচ্ছে কী করব। এভাবে কাজ করা যায় না। আইপ্যাকের ছেলেরা এসে বলছে, ‘এটা করুন, এটা করবেন না, ভোটের কথা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, ওটা আমাদের কাজ, জিতিয়ে আনার জন্য তো আমরা টাকা পেয়েছি।’ ক্ষুব্ধ শীলভদ্রের প্রশ্ন, এভাবে কি ভোট হয়? এমন পরিস্থিতিতে দলের ভাঙন নিয়ে সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে প্রশান্ত কিশোরকেও। সম্প্রতি কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চান, এরকম পরিস্থিতি কেন? জবাবে পিকে জানান, বিজেপি বিভিন্নভাবে এজেন্সির ভয় দেখাচ্ছে। অনেকে লোভে পড়েও এসব করছে। উত্তর শুনে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, বাকি যারা রয়েছে, তাদের বোঝান।

অবশ্য ওই বৈঠকে মমতা এটাও বুঝিয়ে দেন, দলত্যাগীদের নিয়ে খুব একটা ভাবছেন তিনি। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, কে গেল কে থাকল তাতে দলের কিছু আসে যায় না। তৃণমূল মোটেও উদ্বিগ্ন নয়। যারা যাচ্ছে, তারা দলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা নিজেরাই দল ছেড়ে দেয়ায় ভালোই হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580