মানুষের ভোগান্তী নিরসনে দেশের ১৭টি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ই-রেজিষ্ট্রেশন চালু হয়েছে। বর্তমান মহা পরিদর্শক নিবন্ধন শহিদুল ইসলাম ঝিনুকের সাহসিকতার একান্ত প্রচেষ্টার কারনে। এই স্টাডি প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ভূমি রেজিষ্ট্রেশনের জনগণের দুর্ভোগ অনেক কমবে। সার্ভে শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে সারা দেশে এই সেবা চালু হবে অচিরেই। আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের কর্নিয়া সম্পৃক্ত করা, নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র উইং এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরাসরি যোগাযোগ থাকছে। ফলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও জাল দলিলের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
এছাড়া সরকারি রাজস্বও বাড়বে। সবধরনের জমির রেকর্ড স্থায়ী ভাবে সংরক্ষন করতে ভূমি রেজিষ্ট্রেশনের নিজস্ব আর্কাইভ করা হবে। নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম ঝিনুক তার দপ্তরে আজকের সংবাদের এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপ চারিতায় এসব তথ্য জানান। তিনি আরো বলেন প্রধান মন্ত্রীর দিক নিদের্শনা এবং আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সফল মন্ত্রী, বর্তমান সচিব, নির্দেশ ভূমি রেজিষ্ট্রেশন আধুকিনায় করতে ই-রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ৬১টি জেলায় ৫০১টি সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে রয়েছে। (৩ পার্বত্য জেলায় রেজিষ্ট্রেশন আইন প্রযোজ্য নয়)।
সমীক্ষা শেষে ১৭টি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে পরীক্ষামূলকভাবে ই-রেজিষ্ট্রেশন চালু হওয়ায় সাধারণ সেবা প্রত্যাশীরা সুফল পেতে শুরু করেছে। এতে ভূমি অফিসের মিউটেশন সহজতর হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ টাকার উপরে দলিল সম্পাদন করতে গেলে বাধ্যতামূলক টিআইএন নম্বর প্রয়োজন হবে। এতে পে-অর্ডার সঠিক কিনা তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সার্ভারে ঢুকে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসেই বসে নিশ্চিত হতে পারবেন সাব-রেজিষ্ট্রারগণ।
দলিলের সত্যায়িত কপি পাওয়া যাচ্ছে দলিল সম্পাদনে দু’এক দিনের মধ্যেই। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সাব-রেজিষ্ট্রারদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হওয়ায় টেম্পারিং ও জাল করার সুযোগ খুবই কম। পর্যায় ক্রমে আগামী বছর সারা দেশে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে এই সেবায় ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া রশিদ ব্যতিত নেয়া সব টাকায় অবৈধ জানিয়ে মহাপরিদর্শক নিবন্ধন (আইজিআর) আরো বলেন, সেরেস্তা বলতে কোন কিছুই নেই।
দলিল লেখক সমিতি নামে লেখদের কাছ থেকে এজন্য কোন টাকা বা ঘুষ নেয়া হলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ব্যাপারে তথ্য ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। দেশের ৬০ হাজার দলিল লেখক রয়েছে তাদের সঙ্গে অনেক পরিবার সম্পৃক্ত। সব দিক বিবেচনা করে ই-রেজিষ্ট্রেশনে অনলাইনের পাশাপাশি ম্যানুয়ালী কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। টিপ ছাড়া বইয়ের সাথে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এনআইডির সঙ্গে মিল রেখে এই কার্যক্রম দুরগতিতে এগিয়ে চলছে। (আইরিশ) চোখের কর্নিয়ার ছাপ যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভূমি রেজিষ্ট্রেশন ডিজিটাল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিষ্ট্রারগণ কে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ মহতি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্গানোগ্রামে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে জনবল মাত্র পাঁচজন সাধারণ সেবা প্রত্যাশীদের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে জনবল কাঠামো সময় উপযোগী করতে হবে বলেন। বিজ্ঞ সিনিয়র এই দায়রা জজ বর্তমান (আইজিআর) বলেন বৃটিশ শাসন আমলে ১৮১৮ সালে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এর পর থেকে সকল সম্পাদন দলিল ডুপ্লিকেট কপি সবই সংরক্ষিত রয়েছে।
অনেক দলিলের অবস্থা নাজুক হয়ে গেছে। কারণ কয়েশ বছরের পুরানো সব দলিলের ভলিয়ম সংরক্ষন করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এজন্য সব দলিল কে সঠিকভাবে সংরক্ষন করতে রেজিষ্ট্রেশন বিভাগে নিজস্ব আর্কাইভ তৈরি করা হবে। ৫৮টি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে নতুন অফিস নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস চার তলা এবং সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ২ তলা ভবন করা হবে। সব পুরাতন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ভেঙ্গে নতুন করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আইন মন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায়। এছাড়া জেলা রেজিষ্ট্রার ও সাব-রেজিষ্ট্রারের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
চলতি বছরে ৬৬ জন সাব-রেজিষ্ট্রার নিয়োগ পেয়েছে ও শূন্য পদে পিএসসি’র মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। সাব-রেজিষ্ট্রার, অফিস সহকারী স্টাফদের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান, কমিশন ও নকলে বাড়তি টাকা আদায় এবং দূর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যায় বা অপরাধ করে কারো ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। আইজিআর আরোও বলেন দলিল লেখক নকল নবীশ সকলের নিয়োগ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সকল অফিসে জনবল বাড়াতে চাহিদাপত্র তৈরি করা হচ্ছে।
এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লেক্স নির্মাণ করার বিবেচনায় নেই বলে জানান তিনি এই প্রতিবেদক কে। গত সপ্তাহে তেজগাঁও রেজিষ্ট্রি কমপ্লেক্সে অবস্থিত গুলশান সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক গ্রাহকগণ আজকের সংবাদকে জানান ই-রেজিষ্ট্রেশন চালু হওয়াতেই তাদের ভোগান্তি অনেক কমে গেছে। এছাড়া সাব-রেজিষ্ট্রাররা আন্তরিকতার সাথে আমাদের ই-রেজিষ্ট্রেশন দলিলগুলো সম্পাদন করে দিচ্ছেন কোন ভোগান্তি ছাড়াই।