মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং টোল আদায়ে ‘মহাসড়ক বিল-২০২১’ সংসদে পাস হয়েছে। আজ শনিবার বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠান এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলা হয়। এরপর পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়া জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
১৯২৫ সালের হাইওয়ে অ্যাক্ট রহিত করে মহাসড়ক, নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং অবাধ, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ যান চলাচলের জন্য নতুন এই আইন করা হচ্ছে। বিল অনুযায়ী আইন অমান্য করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। বিলে বলা হয়েছে, আইনের অধীনে গেজেট দিয়ে সরকার বলে দেবে কোন সড়ক বা মহাসড়কে কে প্রবেশ করবে বা কে প্রবেশ করবে না। কোনটি মহাসড়কের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে ঘোষণা করা হবে। পরিচালনা কেমন করা হবে। কোনগুলোর টোল নেওয়া হবে।
সরকার বা সরকারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি মহাসড়ক উন্নয়ন, মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ, মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট সুয়ারেজ সিস্টেম, ড্রেন, কালভার্ট, সেতু নির্মাণ ও সংস্কার করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হতে মহাসড়কের সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাসের জন্য মহাসড়ক নেটওয়ার্কের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সহনশীল টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। বিলে বলা হয়েছে, নির্ধারিত মাশুল প্রদান সাপেক্ষে নাগরিক সেবাপ্রদানকারী সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইউটিলিটি সংযোগগুলো মহাসড়কের প্রান্তসীমা বরাবর স্থাপন করা যাবে। তবে মহাসড়কের উন্নয়ন, মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের সময় প্রয়োজন হলে ওই ইউটিলিটি সংযোগগুলো সেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ খরচে নির্দিষ্ট সময়ে অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে স্থানান্তর করবে।
মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের সময় এই কাজের জন্য নিয়োজিতদের ব্যক্তি ও মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করতে হবে তা বলে দেওয়া হয়েছে। বিলে মহাসড়ক বা সড়কের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি, অবৈধ দখল বা প্রবেশমুক্ত রাখার জন্য কী করণীয় হবে এবং সার্ভে করার জন্য কতদূর পর্যন্ত মানুষের বাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে পারবে সেসব বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কে ফসল, খড় বা অন্য কোনো পণ্য শুকানো বা অনুরূপ কোনো কাজে মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে না। মহাসড়কের নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থান দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে না বা এই আইনের অধীন অনুমোদিত উদ্দেশ্য ছাড়া মহাসড়কের কোনো স্থানে অবস্থান করা যাবে না।
বিলে আরও বলা হয়েছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া মহাসড়কে কোনো বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, তোরণ বা অনুরূপ কিছু টাঙানো বা স্থাপন করা যাবে না। ধীর গতিসম্পন্ন যানগুলো মহাসড়কের নির্ধারিত লেইন ছাড়া অন্য কোনো লেইন ব্যবহার করতে পারবে না। খসড়া আইনে মহাসড়কের ক্ষতি হ্রাস, স্থায়িত্ব, সার্বিক নিরাপত্তা ও যানবাহন চলাচলের গতিশীলতা নিশ্চিতে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় বিষয় আইনে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মহাসড়কে নির্দিষ্ট স্থান ও নিরাপদে ব্যবহারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার বিধান বিলে রাখা হয়েছে। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া মহাসড়কে গবাদিপশু চরানো, প্রবেশ করানো, পারাপার করানো যাবে না বলে বিলে বলা হয়েছে।