শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

মারধরের প্রতিশোধ নিতে ঘুমন্ত স্বামীকে হত্যার পর ৬ টুকরো

 গাজীপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ৩০ মে, ২০২১
  • ১৯৯ পাঠক পড়েছে

গাজীপুরে পরকীয়ার কারনে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে মারধর করার প্রতিশোধ নিতে ঘুমন্ত সুমন মোল্লাকে (২৮) শ্বাসরোধে হত্যার পর ৬ টুকরো করা হয়।

পরে লাশের টুকরোগুলোসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত করাত ও চাপাতি বিভিন্ন স্থানে ফেলে গুম করার চেষ্টা করেছে নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিক। ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিক পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

এর প্রেক্ষিতে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় ৪১ দিন পর রহস্য উন্মোচন করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।

রবিবার দুপুরে জিএমপি’র উপ কমিশনার মো. জাকির হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- দিনাজপুরের চিরির বন্দর থানার নারায়নপুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর মেয়ে মোসা. আরিফা (২৪) ও ফরিদপুরের মধুখালী থানার নরকোনা এলাকার আদিত্য সরকারের ছেলে তনয় সরকার (৩১)।

জিএমপি’র উপ কমিশনার মো. জাকির হাসান জানান, গত ২১ এপ্রিল দুপুরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারদারগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুর পাড় এলাকার জালাল উদ্দিনের বাড়ির পাশের খোলা সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে কাঁথা দিয়ে পেঁচানো মাথা ও হাত-পা বিহীন অবস্থায় অজ্ঞাত এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে এস আই মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে কাশিমপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ক্লুলেস এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরিফা বেগম ও তার প্রেমিক তনয় সরকারকে শনিবার ভোরে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে জিএমপি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা খুন করার কথা স্বীকার করে উদ্ধারকৃত লাশটি আরিফার স্বামী সুমন মোল্লার (২৮) বলে জানায়। সুমন মোল্লা বাগেরহাটের চিতলমারী থানার গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে।

সুমনের স্ত্রী আরিফার সঙ্গে সহকর্মী তনয় সরকারের পরকীয়ার কারনে মারধর করার প্রতিশোধ নিতে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে সারদাগঞ্জের হাজীবাড়ি পুকুরপাড় ময়লার স্তুপ হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত এবং সকালে তেতুইবাড়ি এলাকার মোজা তৈরির কারখানার পাশে থাকা ময়লার ভাগাড় থেকে পলিথিনে মোড়ানো সুমনের লাশের মাথা, দুই হাত ও দুই পা উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া তনয়ের ঘর থেকে নিহত সুমনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দু’জনকে রবিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় ৪১ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ খুনের রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, প্রায় দেড় বছর আগে ভালবেসে আরিফাকে বিয়ে করেন সুমন মোল্লা (২৮)। এটি সুমন মোল্লার তৃতীয় এবং আরিফার দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর এ দম্পতি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট এলাকার মাওলানা শফিউল্লাহর বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

আরিফা গত চার বছর ধরে স্থানীয় স্কয়ার টেক্সটাইল মিলে চাকুরি করেন। একই কারখানায় চাকুরি করেন প্রতিবেশী হাজী মতিউর রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া তনয় সরকার। পরিচয়ের সূত্র ধরে দু’সহকর্মী আরিফা ও তনয়ের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ ঘটনা জানতে পেরে জানতে পেরে ভিক্টিম সুমন তার স্ত্রী আরিফা ও তনয় সরকারকে কয়েকবার মারধর করেন। এর প্রতিশোধ নিতেই তারা সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনানুযায়ী পরে ১৯এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষে স্বামী সুমনকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেয় তার স্ত্রী আরিফা। সুমন ঘুমিয়ে পড়লে আরিফা ফোন করে প্রেমিক তনয়কে ডেকে মধ্যরাতে বাসায় আনে। পরে বালিশ চাপা দিয়ে সুমনকে হত্যার পর তার লাশ গুম করার অপেক্ষায় ঘরের ভেতর রেখে দেয়।

পরদিন বাজার থেকে করাত কিনে আনে তনয়। রাতে আরিফা ও তনয় করাত দিয়ে সুমনের লাশের মাথা, দুই হাত ও দুই পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মোট ৬ টুকরো করে। এসময় চাপাতি দিয়ে লাশের পেট কেটে দেয় তারা। পরে ২০ এপ্রিল রাতে হাত-পা বিহীন দেহটি কাঁথায় মুড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জামাল উদ্দিনের বাড়ির পাশে উন্মুক্ত সেপটিক ট্যাঙ্কে/নদর্মায় এবং ২১ এপ্রিল রাতে দেহের অবশিষ্ট পাঁচটি খন্ড (মাথা, দুই হাত ও দুই পা) পলিথিনে মুড়িয়ে স্থানীয় চক্রবর্তী তেতুইবাড়ি এলাকার মোজা তৈরির কারখানার পাশে থাকা ময়লার ভাগাড়ে ফেলে রাখে। পরে তারা ঘর ধুয়ে রক্ত পরিষ্কার করে। এ ঘটনার কয়েকদিন পর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত সারদাগঞ্জের হাজীবাড়ি পুকুরপাড় ময়লার স্তুপে ফেলে আরিফা ওই বাসা ছেড়ে তার বোনের বাসায় আত্মগোপন করে।

প্রেস ব্রিফিংকালে জিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারি কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার, কাশিমপুর থানার ওসি মাহবুবে খোদা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580