আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছাকে ফেরত চান তার স্ত্রী পান্না আক্তার।
পান্নার অভিযোগ, মিতু হত্যার ১৭ দিন পর গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে মুছাকে তুলে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ শুরু থেকে তা অস্বীকার করে আসছে।
মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের দাবি, মুসাকে মিতু হত্যার ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। তিনি মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সোর্স ছিলেন। তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার ২ নম্বর আসামিও মুছা।
শনিবার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার বলেন, এতদিন সন্তানদের নিরাপত্তার ভয়ে মুখ খুলিনি। পাঁচটি বছর স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন কেটেছে। আমার স্বামী বাবুল আক্তার ও প্রশাসনের সোর্স ছিলেন। আমার স্বামী যদি দোষী হয় তাহলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। তাকে আদালতে হাজির করা হোক। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। মামলার স্বার্থে মুছাকে আদালতে হাজির করা হোক।
তিনি বলেন, মিতু হত্যার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যখন মুছা দরজা খুলে বাসায় প্রবেশ করছিলেন, তখন জানতে পারি তিনি সকালে বের হয়েছিলেন। তার পরনে ছিল থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। শরীরে ছিল টি শার্ট। হাতে দোকান থেকে কেনা পরোটা নিয়ে বাসায় ঢোকেন। নাস্তা করার সময় তিনি টিভি দেখছিলেন। টিভিতে দেখে তখন মিতু হত্যার বিষয়টি আমি জানতে পারি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার পরিচিত লোকের স্ত্রীকে মেরে ফেলছে আপনি দেখতে যাবেন না? তখন তিনি বলেন, তিনি তো ঢাকায়, ওখানে সাধারণ মানুষের কাজ নেই। উনি আসলে দেখা করে আসবো।
পান্না আক্তার বলেন, এর কিছুদিন পর মোবাইল বাসায় রেখে বাইরে যান মুছা। এসময় একটা টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ওই প্রান্ত থেকে একজন জানতে চান মুছা কোথায়। তিনি বাইরে গেছেন এটা জানালে কল করা ব্যক্তি বলেন, তাকে সাবধানে থাকতে বলবেন।
তখনো মিতু হত্যায় মুছা জড়িত তা তিনি জানতেন না জানিয়ে পান্না বলেন, ২০১৬ সালের ১৮ বা ১৯ জুন মুছার কাছে একটা ফোন আসে। তখন তিনি আমার কাছ থেকে একটু সরে যান। ওই প্রান্ত থেকে কি বলেছে তা শুনিনি। কিন্তু মুছাকে বলতে শুনেছি- আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে আমি মুখ খুলবো স্যার। ফোন রেখে দেওয়ার পর মিতু হত্যায় তিনি জড়িত কিনা জানতে চাইলে মুছা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি চাই নাই। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। নয়তো আমাকে বাঁচতে দিতো না। আমি সরাসরি ছিলাম না। লোকজন ঠিক করে দিয়েছি। ফোন করা ব্যক্তি বাবুল আক্তার ছিলেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
মুছাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে অভিযোগ করে পান্না আক্তার বলেন, মুছার ভাইদের গ্রেপ্তারের পর ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তিনি ফোন করে আদালতে আত্মসমর্পণের কথা জানান। ওই সময় পতেঙ্গার কাঠগড় এলাকায় মুছার বন্ধু নুরনবীর বাসায় ছিলাম আমরা। মুছার পরদিন সকালে ওখানে আসার কথা ছিল। ২২ জুন সকালে নুরনবীর বাসায় পুলিশ আসে। তারা মুছা এসেছে কিনা জানতে চান। এ সময় নুরনবীর ফোনে মুছার ফোন আসে। নুরনবীকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে লাউডস্পিকারে ফোন রিসিভ করতে বলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এ সময় মুছা কোথায় আছেন তা জানতে বলেন। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী নুরনবী তা জানতে চাইলে মুছা কাঠগড় তিন রাস্তার মোড়ে আছেন বলে জানান। তাৎক্ষণিক পুলিশ সদস্যরা নুরনবীকে পিকআপ ভ্যানে ও আমাকে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। তিন রাস্তার মোড় এলাকায় পৌঁছালে পিকআপ ভ্যান থেকে নেমে নুরনবী মুছাকে দেখিয়ে দেন। পুলিশ পিকআপ ভ্যানে তুলে মুছাকে নিয়ে যায়। নুরনবী ও আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যায়। এ বিষয়ে নুরনবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তথ্য পাওয়া যাবে।