জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ দাবি করা বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেছেন তথ্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তার দাবি, মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার ভূমিকা ছিল ‘বদলি দফতরির’ মতো।
বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন বর্তমান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী।
‘আজকের ইতিহাস বিকৃত করা হয়। আজকে খলনায়ককে নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়। স্কুলের দপ্তরিকে স্কুলের হেডমাস্টার বানানোর চেষ্টা করা হয়। আমি আগেও বলেছি আজকেও বলবো, যেকোন স্কুল ছুটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে হেডমাস্টার। স্কুলের ঘণ্টা বাজায় দফতরি। জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় বদলি দপ্তরি।’
জিয়া কীভাবে বদলি দপ্তরি তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ২৬ শে মার্চ সকাল থেকে তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান, চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বারবার ঘোষণা করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ তারিখ স্বাধীনতার পক্ষে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করে শোনায়। তাহলে ২৬ তারিখ যেহেতু একবার ঘণ্টা (স্বাধীনতার ঘোষণাকারী) বেজে গেছে, ২৭ তারিখ যে ঘণ্টা বাজায় সে হলো বদলি দপ্তরি।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তখন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বেয়ারার ছিলেন নুরুল হক। ২০০৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তার যে ভিডিও সে বক্তব্য আমরা ধারণ করে রেখেছি, এটি সংরক্ষিত আছে। যখন চট্টগ্রাম শহরে হত্যাযজ্ঞ চলছে, তখন জীবনকে হাতে নিয়ে নুরুল হক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা রিকশায় করে মাইকিং করেছেন। চট্টগ্রাম শহরে শুনিয়েছেন।’
স্মৃতিচারণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সে সময় আমি অনেক ছোট ছিলাম। তবে সে সময়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনও আমার মধ্যে জ্বল জ্বল করে। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা করে গিয়েছেন, যা পৃথিবীর অনেক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকায়। এমনকি পাকিস্তানের পত্রিকায়ও ছাপানো হয়।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন না করায় বিএনপির সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। বিএনপিকে ইতিহাস মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
‘আমি আশা করেছিলাম, আজকে বিএনপি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করবে। বিএনপিকে বলবো, ইতিহাসকে মেনে নিন। ইতিহাসকে মেনে না নিলে, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।’
বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি কিন্তু বিএনপি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য আমাদের একটিবার ধন্যবাদ জানাতে পারেননি।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি জানি আপনাদের খুব লজ্জা বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আপনাদের যদি সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে লজ্জা লাগে আপনারা তো জাতিকে একটি ধন্যবাদ দিতে পারতেন। সেটি দিতেও আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন।
‘আমি আহ্বান জানাবো, বিএনপিসহ যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করেন এই পথ পরিহার করুন। আপনারা সরকারের সমালোচনা করুন। আমরাও চাই সমালোচনা হোক। একটি বহুমাত্রিক সমাজে আমরা বসবাস করি। সেই জন্য সমালোচনা যেন অন্ধ কিংবা বোবাদের মত সমালোচনা যেন না হয়।’
বর্তমান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এই মন্ত্রীর মতে, রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে আশার আলো দেখানো। জনগণকে ক্রমাগত হতাশ করা কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা রাজনীতিবিদের দায়িত্ব নয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আরও কিছু লোক আছে আমি তাদের নাম দিয়েছি ভুল ধরা পার্টি। তাদের কাজই হচ্ছে কোনো জায়গায় কোন অর্জন হলে ভুল ধরা। এই যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলাম, এটিতে কী অসুবিধা হবে, এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে তারা ব্যস্ত।
‘জাতির অর্জন তাদের পছন্দ নয়। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটি তাদের পছন্দ নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটি পাকিস্তানিদেরও পছন্দ নয়। পাকিস্তান আজকে হা-হুতাশ করছে বাংলাদেশ আমাদের পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেল। সুতরাং পাকিস্তানিদের সঙ্গে বিএনপির অনেক মিল আছে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।