দেশের ইতিহাসের অন্যতম সম্মানীত পরিবার হচ্ছে ঢাকার নবাব পরিবার। এ পরিবারের এক সুর্য সন্তানের নাম মৌলভী খাজা আব্দুল্লাহ। ইতিহাসের পাতায় শিক্ষা সংস্কৃতির লালন ও মানবিকতার উদহরণ হয়ে আছেন মৌলভী খাজা আব্দুল্লাহ। তার মৃত্যুর পরও নবাব পরিবারের ঐতিহ্য ধারণ করে যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মৌলভী খাজা আব্দুল্লাহ‘র জীবনকর্ম ও স্মৃতি বেঁচে থাকে সে জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল মৌলভী খাজা আব্দুল্লাহ ট্রাস্ট।
যুগ যুগ ধরে এ ট্রাস্টটি সুনামের সাথে কাজ করে আসলেও সম্প্রতি এ ট্রাস্টের ট্রা্িস্টদের বিরুদ্ধ দূর্নীতি স্বজন প্রীতি ও অর্থ আত্মসাতের মতো বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে এ ট্রাস্টটি কযেকজন বিশেষ ব্যক্তি কুক্ষিগত করে রেখেছে মর্মেও অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নবাব পরিবারের অতীত ঐতিহ্য ও সম্মানের কথা বিবেচনায় অনেকেই এ পরিবারের সমসাময়িক অনেক ঘটনা চেপে যান। কিন্তু মৌলভী খাজা আব্দুল্লাহ ট্রাস্টের অর্থ সম্পদ লোপাট ও নিয়মের বাইরে গিয়ে ট্রাস্ট পরিচালনার বিষয়টি একেবারেই কদর্যতার শেষ সীমায় পৌছে গেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ট্রাস্টের সদস্য হবেন ১১ জন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মাত্র ৫জন ব্যক্তি এ ট্রাস্ট পরিচালনার নামে পারষ্পারিক যোগ সাজস্যে ট্রাস্টের অর্থ সম্পদ লোপাট করে চলেছে।
ট্রাস্টি বোর্ডে থাকা ৫ সদস্যের দূর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছুছে যে, তারা হাইকোর্টে চলমান একটি মামলার রায় তাদের পক্ষে আনার খরচ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকে থাকা ট্রাস্টের একটি এফডিআর ভেঙ্গে খরচ করে ফেলেছেন। আর হাইকোর্টের রায় নিজেদের পক্ষে আনার জন্য এটা খরচ করছেন এমন কথা তারা রেজুলেশন নিয়ে তা পাশ করেছেন। শুধু পাশই করেননি ২৭/০২/২০১৯ ইং তারিখে মৌলভী খাজা আব্দুল্লাহ ট্রাস্টের ভাউচার নং ৫৯৩ এ মামলার এডভোকেটকে ২০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে এমন ভাউচার দেখানো হয়েছে। কিন্তু রিসিভার হিসেবে একটি অনুস্বাক্ষর রয়েছে। ভাউচারে কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর থাকলেও সেখানে কোন সিল ব্যবহার করা হয়নি।
হাইকোর্টের রায় কোন অবস্থাতে টাকা দিয়ে নিজের পক্ষে আনা যায় কিনা এমন প্রশ্ন তোলায় ট্রাস্টের সাথে যুক্ত কয়েকজনকে আর ট্রাস্টের কোন কাজ কর্মে অংশ নিতে দিচ্ছে না সাবেক চেয়ারম্যন খাজা সাঈদসহ তার লোকজন। অভিযোগ উঠেছে পারস্পারিক যোগসাজসে ট্রাস্টি বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান খাজা মোঃ সাঈদ, সেক্রেটারি খাজা মোঃ হানিফ, ট্রেজারার খাজা ওয়াজে, ও অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য খাজা রাসেল ট্রাস্টেও অর্থ লুটপাট করে চলেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ট্রাস্টের টাকা লুটপাটের প্রমান থাকলে তার বিরুদ্ধে ফৌজধারী মামলা করার বিধান রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শেয়ারহোল্ডার বলেন, আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজধারী মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান খাজা মোঃ সাঈদ দৈনিক আজকের সংবাদকে বলেন টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাকে টাকা দেয়া হয়েছে তার নাম বলা যাবেনা। তিনি একই সাথে স্বীকার করে বলেন, রেজুলেশনে এমন কথা বলা ঠিক হয়নি। ট্রাস্টের সেক্রেটারি খাজা মোঃ হানিফ এসব বিষয়ে বলেন, কাকে টাকা দেয়া হয়েছে, তা বলা যাবে না। সবাই মিলেই টাকা দেয়া হয়েছে। ট্রেজারার খাজা ওয়েজ বলেন, টাকা কাকে দেয়া হযেছে তা বলা যাবে না। তবে তিনি সাংবাদিককে ট্রাস্টে এসে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। জানা যায়, এ ট্রাস্টের অন্যান্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে গুলশান আরা সিটি। ব্রিটিশ সরকারের আমল থেকে এ সম্পত্তির নিরঙ্কুশ মালিক ও দখলদার এ ট্রাস্ট। এ ছাড়া এ ট্রাস্টের আওতায় রয়েছে মদিনা মার্কেট। যেখান থেকে প্রতিমাসে ভাড়া তোলা হয় । সে ভাড়ার টাকাসহ অন্যান্য খাতের টাকা ব্যায়েও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসি।