মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ মৎস্য অধিদপ্তরের ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি না পেলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। প্রকল্পটিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অনেকটা ঘোষণা দিয়েই ঘুষ গ্রহণ করেন। প্রকল্পটির প্রতিটি কর্ম এরিয়ায় এভাবে আদায় করা হয় ঘুষ। প্রকল্প পরিচালক আলীমুজ্জামানের আদেশে এভাবে টাকা আদায় করা হয় বলে বগুড়া জেলা মৎস্য অফিস থেকে জানানো হয়।
এবিষয়ে আলীমুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন বগুড়া অফিসে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশন আলিমুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট প্রেরণ করে। মাহাবুবুল হককে সভাপতি এবং মাহবুব উল হক ও জিয়া হায়দার চৌধুরীকে সদস্য করে অধিদপ্তরটি ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে দেন। শুরু থেকে অনিয়মে জর্জরিত প্রকল্পটি।
জলাশয় সংস্কারে মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পটিতে প্রথম পর্যায়ে নাম অর্ন্তভুক্তির সময় ১০%, বাজেট বরাদ্দের সময় ১০% অফিস খরচ নেয়া হয় সুবিধাভোগীর নিকট থেকে। এছাড়াও গাছ লাগানো,মাছ ছাড়া পানি সেচ ও ঘাস লাগানো বাবদ ১০-২০% টাকা আদায় করা হয় মাঠ পর্যায়ে। এবিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে অনেকেই অভিযোগ করে কিন্তু মহাপরিচালক অথবা সচিব কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।
ক্ষুব্ধ হয়ে জনৈক ওহিদুল ইসলাম একটি অভিযোগ দুদকের বগুড়া অফিসে দাখিল করে। পরবর্তীতে দুদকের সুপারিশে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত টিম ১ জানুয়ারী ২০ সালে বগুড়া জেলা মৎস্য দপ্তরে তদন্ত করেন। তদন্তে প্রকল্প পরিচালক প্রাক্তন মৎস্য কর্মকর্তা তার মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা ধার করেছিল তাই পরিশোধ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, পিডি’র নিকট কোন টাকা ধার করেন নি পরিশোধ করার কোন প্রশ্নই আসে না বলে প্রাক্তন এই জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান।ওহিদুল ইসলাম প্রকল্প পাশের জন্য পিডি আলীমুজ্জামানের ব্যাংক হিসেবে ৮ লক্ষ টাকা জমা যার কপি আজকের সংবাদের হাতে এসেছে।
সারা বাংলাদেশের ঘুষ নেওয়ার ক্ষেত্রে আলীমুজ্জামান ফরিদপুরের এক্সিম ব্যাংকের পারিবারিক হিসার নম্বর ও তার নিজ নামে মতিঝিল ইস্টার্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বর ব্যবহার করে থাকেন। অভিযোগকারী অনেকের বক্তব্য না নিয়ে পিডি আলীমুজ্জামানের বক্তব্যের উপড় নির্ভর করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরে আকরাম হোসেন অভিযোগ করেন। তদন্ত কমিটির সভাপতি মাহবুবুল হক বর্তমানে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তদন্ত প্রতিবেদনটি নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরেই চলে কানাঘুষা, তথ্য প্রশাণ থাকার পরও কিভাবে দায়মুক্তি পেলেন পিডি আলীমুজ্জামান। এসব বিষয়ে মহাপরিচালকের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলতে বলেন। ৫৩ জেলায় চলমান প্রকল্পটি দায়সারা ভাবে শেষ পর্যায়ে। সরেজমিনে প্রকল্পটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়,প্রকল্পের অনেক ঠিকাদারই পিডি আলীমুজ্জামানর পুর্ব পরিচিত। পরিচিত ঠিকাদার মানে কমিশনের বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা থাকেনা।
দুদকের জন্য ০.৫% ,সাংবাদিকদের জন্য ০.৫%,উপসহকারী প্রকৌশলীর খরচ ০.২৫% এবং অডিট ম্যানেজ করার জন্য ১.৫% টাকা নেয়া হয় বগুড়া অফিস থেকে,বিষয়টি জানাজানি হলে যে সকল কর্মকর্তা কাগজে স্বাক্ষর করে এই টাকা গ্রহণ করেন তাদের বাদী করে প্রাক্তন মৎস্য কর্মকর্তা রওশন আরা বেগমের উপড় দোষ চাপিয়ে থানায় জিডি করানো হয়। আবার ব্যাংক হিসেবে ঘুষ লেনদেনের জবাবে আলীমুজ্জামান জবাবে এই রওশন আরা তার অগ্রজ এবং ব্যক্তিগত সর্ম্পক ভালো দাবী করলেও অন্য একাংশে তার বিরুদ্ধে অর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলেন।
তদন্তের একই জবাবে ভিন্ন ভিন্ন অংশের বক্তব্য মিল নেই। এই দায়সারা বক্তব্য ও অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে পিডির কার্যালয়ে গেলে তিনি কোন ডিভাউস বা রের্কডিং না করার শর্তে কথা বলতে রাজী হন। আলীমুজ্জামান বলেন,প্রকল্প পরিচালকের পদে বসার পর থেকে অফিস ও মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতনদের নানা অবদার মেটাতে হয়। কাজের অডিট রিপোর্টের মান ভাল দেখানোর খরচের পাশাপাশি আমার একটা ব্যয় আছে সব খরচ ব্যয় হয় প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন জোড় করে কারো নিকট কিছু নেন না যারা দেয় খুশী হয়ে দেয়।