লালমনিরহাট জেলা জুড়ে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আলু চাষে ভাটা পড়েছিল। নানা প্রতিকূলতায় আগাম আলু চাষও পিছিয়ে পড়েছিল। বৃষ্টিতে রোপণকৃত আলু পচে নষ্ট হলেও হাল ছাড়েননি কৃষকরা। নতুন করে ওই জমিতে আলু চাষের চেষ্টা করছেন কৃষকরা। আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই আগাম আলু রোপণের ধুম পড়েছে তিস্তা ও ধরলা চরাঞ্চল।
আলু চড়া মূল্যের মাঝেও বিভিন্ন এলাকা থেকে আলু বীজ সংগ্রহ করে সময়ের আগে আলু রোপণকে ঘিরে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে মাঠজুড়ে।
লালমনিরহাট কৃষি অফিস জানান, লালমনিরহাট অঞ্চলে রবি মৌসুমের অর্থকরী ফসল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আলু। এ ছাড়া লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় একসময়ের পতিত থাকা তিস্তার চরে আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এই পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চলে ১৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগাম ও স্বল্পমেয়াদি জাতের আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকরা আগাম আলু রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে বেশি মুনাফার আশায় লালমনিরহাটের কৃষকরা আমন ধান কাটার পর শীতকালীন ফসল হিসেবে আগাম আলুর চাষ করে থাকেন। বাজারে আলু দাম বেশি হওয়ায় লালমনিরহাটের ৬৩ চরে আলু চাষে দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা।
জানাগেছে, প্রতিবছর এই এলাকায় আগাম আলু চাষ করে মানুষ তাদের ভাগ্য বদল করেছে। কিন্তু এ বছর অনেকে আগাম আলু রোপণ করে আশ্বিনা বৃষ্টিতে জমি তলিয়ে যাওয়ায় আলু বীজ নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে অবহাওয়া শুস্ক থাকায় কৃষকরা আবারও আলু চাষে ঝুঁকছেন।
বর্তমানে চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বীজ আলু প্রতি মণ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১ শত টাকা দরে কিনে জমিতে চাষ করছেন। আগাম আলুর দাম পাওয়া নিয়ে শংসয় আছেন তারা।
হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের কৃষক মোকারম হোসেন জানান, রংপুর থেকে চড়া দামে আলুর বীজ সংগ্রহ করে জমিতে আলু চাষ করছি। আগাম আলু বাজারে তুলতে পারলেই ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা যাবে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ছয়আনী গ্রামের কৃষক খাদেম আলী জানান, তিস্তা চরাঞ্চলের মাটি হচ্ছে বালুমিশ্রিত। ভারি বৃষ্টিপাত হলেও আলুখেতের ক্ষতি হয় না। তাই আগাম আলু চাষে কোনো ভয় থাকে না। এবার আমি নিজেও চরাঞ্চলের প্রায় দুই একর জমিতে আলু লাগিয়েছি।
ফকিরপাড়ায় আলু চাষি রাব্বী বলেন, চড়াদামে আলুর বীজ কিনে দামের আশায় আগাম আলু রোপণ করেছি। জানি না আলুর ফলন কেমন হয়।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, হাতীবান্ধার ১০টি চরে আলুর উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ১৬ হাজার ২ শত ২৫ মেট্রিক টন ও চাষাবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৫ শত ৯০ হেক্টর জমিতে।
পাটগ্রাম উপজেলার কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা সেবিন খন্দকার জানান, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনে মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসলে আলুর দাম কমে যাওয়া সম্ভবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ বলেন, এখন যে জমিতে কৃষকেরা আলু লাগাচ্ছেন, তা ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। বর্তমান আলু দাম চড়া তাই কৃষকেরা আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানে আমরা তৎপর রয়েছি।