রাঙ্গাামাটি বন সার্কেলের ঝুম নিয়ন্ত্রন বন বিভাগের জামতলী স্টেশন কর্মকর্তা ফরেস্টার ইয়াহিয়া’র নেতৃত্বে চলছে ঢালাও চাঁদাবাজি। চলছে ভুয়া জোত পারমিটের অনুবলে ইস্যুকৃত টিপি মূলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে আহরিত অবৈধ কাঠ বোঝাই ট্রাক থেকে চেকিং এর নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়। প্রতিদিনই ১০ থেকে ২০টি ট্রাক বোঝাই চোরাই কাঠ এই চেকপোস্ট দিয়ে পাচার হলেও দেখার কেউ নেই।
দায়িত্বে নিয়োজিত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার ইয়াহিয়া ট্রাক প্রতি মোটা অংকের বিনিময়ে পাচারের সহযোগিতা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কাঠ পাচার ও চুরিতে সিদ্ধহস্ত এই ফরেস্টার ইয়াহিয়া দীর্ঘ চাকুরী জীবনে বন বিভাগের বিভিন্ন লোভনীয় স্থানে চাকুরি করে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করেছেন। যশোরের চৌগাছায় বিলাসবহুল বাড়ি, নিজ স্ত্রী ও আপনজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে মোটা অংকের টাকা জমা, নিজ বাড়ী এলাকায় ৩১ বিঘা জমি ক্রয়সহ রাজধানী ঢাকাতে রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে রাঙ্গামাটি সার্কেলের অধীন ঝুম নিয়ন্ত্রন বন বিভাগের জামতলী স্টেশন ভৌগোলিক অবস্থানের বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বন বিভাগে ভূয়া জোত পারমিটের অনুকূলে কাঠ বোঝাই ট্রাকের স্বপক্ষে যেসব চলাচল পাস (টিপি) ইস্যু করা হয় এবং টি পি মূলে যেসব কাঠ বোঝাই ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলায় গমন করে বেশীরভাগ ট্রাক জামতলী চেক স্টেশন সম্মুখ দিয়ে যেতে হয়। যার ফলে প্রতিটি কাঠ বোঝাই ট্রাক জামতলী চেক স্টেশন অতিক্রম করার সময় স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াহিয়া ফরেস্টারকে প্রতি কাঠ বোঝাই ট্রাক এর জন্য ৮ হাজার টাকা করে দিতে হয়। এই টাকা না দিলে ইয়াহিয়া ট্রাকে বোঝাই কাঠের সাথে টিপিতে বর্ণিত কাঠের মিল নেই বলে কাঠ ও ট্রাক জব্দ করার হুমকি দেন। ট্রাকে পরিবাহিত কাঠের মালিককে তাই বাধ্য হয়েই ইয়াগিয়া ফরেস্টারের দাবিকৃত টাকার চাহিদা পূরণ করতে হয়।
আদায় কৃত টাকা প্রতিদিন ইয়াহিয়া ফরেস্টার সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ তার অধীনস্থদের মধ্যে বন্টন হয়। ইয়াহিয়া চাঁদা আদায়ের মোট অর্থের অর্ধেক পেয়ে থাকেন। এছাড়া জামতলী স্টেশনে আটককৃত অবৈধ কাঠ বোঝাই গাড়ী বন মামলার (সিওআর)’র মাধ্যমে ক্ষতি পূরন আদায় করে রাজস্ব রশিদের মাধ্যমে অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু ফরেস্টার ইয়াহিয়া গাড়ী মালিকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আদায় করে সামান্য টাকা সরকারী রশিদের মাধ্যমে রাজস্ব জমা করে। সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেয়া তার নিত্য দিনের গটনা। ঠিকানা অনুযায়ী অবৈধ কাঠ বোঝাই ট্রাক মালিকদের সাথে যোগাযোগ করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে বলে একটি নির্ভর যোগ্যে সুত্রে প্রকাশ। সম্প্রতি তাকে একই ডিভিশনের মেরুল রেঞ্জের ও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সুত্রমতে দূর্ণীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই ফরেস্টার ইয়াহিয়া আবারো রেঞ্জের দায়িত্বে গেলে কাঠ পাচার প্রক্রিয়া ত্বরান্নিত হবে বলে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা মনে করেন। উল্লেখ্য জামতলী স্টেশনে আগত অবৈধ কাঠভর্তি ট্রাক সমূহে যে সকল জোত পারমিট’র অনুবলে কাঠ কেটে আনা হয়েছে বলে দেখানো হয়। সে সকল জোত পারমিট সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও ভুয়া। ইস্যুকৃত জোত পারমিটে ভূমির অবস্থানে নিরপেক্ষ তদন্ত করলে গাছের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। কারণ জোতের যেখানে দেখানো হয় সেখানে প্রকৃত অর্থে গাছ থাকে না। ইস্যুকৃত পারমিটের বর্ণিত গাছ সরকারী বন এবং বিভিন্ন লোকের বাড়ি হতে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যা বনজদ্রব্য পরিবহন নীতিমালার পরিপন্থি।
জোত পারমিটের অনুবলে যে চলাচল পাস ইস্যু করা হয় ঐ সব চলাচল (টিপি) পাশের সাথে ট্রাকে বোঝাই কাঠের জোত মাপ ও পরিমাপ মিলানো হলে বেশিরভাগ কাঠের টুকরার সাথে ট্রাকে বোঝাই কাঠের জাত, মাপ ও পরিমাপে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া যাবে। এসব অবৈধ কাজ অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে দীর্ঘদিন চালিয়ে যাচ্ছেন জামতলী স্টেশন কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা। এত অনিয়ম করার পরও জামতলী স্টেশন কর্মকর্তা ইয়াহিয়া ফরেস্টর বহাল তবিয়তেই জামতলী স্টেশনে বহাল রয়েছেন। বহাল রয়েছেন। তার কৃত দুর্নীতি ও অনিয়মের কোন শাস্তি হচ্ছে না।