দেশজুড়ে কঠোর লকডাউনের প্রথমদিন রাজপথে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; দ্বিতীয় দিনও পরিস্থিতি তেমনই আছে। অতি জরুরি ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। সাপ্তাহিক ছুটি আর বৃষ্টির প্রভাবও পড়েছে সড়কে।
বৃহস্পতিবার রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টির পর শুক্রবার সকাল থেকেই একটানা বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানীতে। কোনও কোনও সড়কে পানি জমে গেছে। পানি জমে গেছে গলির মধ্যেও।
আগেরদিন সকালে নিত্যপণ্য কেনার জন্য বিভিন্ন এলাকায় মানুষ বের হলেও এদিন উপস্থিতি অনেকটাই কম। গলিতে গলিতে শুধু সবজি ও নিত্যপণ্যের দু-একটি দোকান দেখা গেছে। মূল সড়কে মানুষ নেই বললেই চলে।
রাজধানীর বেশ কিছু সড়ক ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান দেখা গেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গাড়ি টহল দিচ্ছে সড়কে।
মগবাজার মোড়ে বৃষ্টির মধ্যেই সবজি কিনতে এসেছিলেন সুমন হোসেন। তিনি বলেন, কিছু বাজার দরকার ছিল। তাই বাধ্য হয়েই বাসার নিচে নেমেছেন।
সকাল ১০টার দিকেও বৃষ্টি পড়ছিল নগরীতে। অল্প কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন দেখা গেছে সড়কে। তবে রিকশা চলছে। চলছে মোটরসাইকেল ও নিত্যপণ্যের কিছু যানবাহন। এখনও পর্যন্ত আগেরদিনের মতো রাজধানীতে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।
এরআগে বৃহস্পতিবার কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন প্রশাসনের কড়া অবস্থানের কারণে অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক-মহাসড়ক ছিল প্রায় ফাঁকা। যারা যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া বের হয়েছেন, তাদের অনেককে জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকে আবার আটকের পর মুচলেকায় ছাড়া পান। কাউকে কাউকে সুনির্দিষ্ট আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
লকডাউন অমান্য করে রাস্তায় নামায় প্রথম দিন রাজধানীতে ৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মুচলেকায় ছাড়া পান ৩৯১ জন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে অর্থদণ্ড করা হয় ২১২ জনকে। সব মিলিয়ে প্রথম দিন রাজধানীতে শাস্তির মুখোমুখি হন এক হাজার ১৫৩ জন। আর ২৭৪ যানবাহনকে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজার মুখোমুখি হয়েছেন ৮১ জন।
ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর ও জেলাগুলোতে গ্রেপ্তারের ঘটনা নেই। তবে অনেককে অর্থদণ্ড ও শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন বিধিনিষেধ বেশ ভালোভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে। পুরো সময়টা এমন শক্ত অবস্থানে পুলিশ থাকবে। করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মধ্যে কিছুটা সচেতনতাও তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে তরুণ ও কম বয়সীদের মধ্যে বিধিনিষেধ মানার প্রবণতা কম। অনেক এলাকায় অলিগলিতে তারা আড্ডা দেয়। পুলিশ দেখলে দৌড়ে পালায়। পুলিশ চলে গেলে আবার আড্ডা বসায়। বয়স কম হওয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তাদের কম হলেও তারা বাসায় বয়স্কদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে- এই বোধ তাদের মধ্যে তৈরি হতে হবে।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, জনসাধারণকে সরকারি বিধিনিষেধ মানাতে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনও করছে পুলিশ। জরুরি সেবায় নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে নির্বিঘ্নে যেতে পারবেন।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুই শতাধিক প্লাটুন সদস্য ৬৪ জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে।
গত বছর করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এ বছরও বেশ কয়েক দফা লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সংক্রমণ পরিস্থিতিতি খারাপা হওয়ায় আলাদা করে কয়েকটি জেলাও লকডাউনও করা হয়। তবে সর্বশেষ পহেল জুলাই থেকে ঘোষণা করা হয় কঠোর লকডাউন।