নারায়ণগঞ্জের রয়্যাল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ হওয়া ও সেখান থেকে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনরত সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলামকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। স্বাভাবিকভাবে সরকারি চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম না করলেও তাকে ‘জনস্বার্থে’ অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে রফিকুল ইসলামকে অবসরে পাঠানোর আদেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। দুই সপ্তাহ আগে তাকে ওসির দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত (সোনারগাঁও থানার সাবেক ওসি) পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. রফিকুল ইসলামকে তার চাকরি জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হলো। তিনি বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন।
এর আগে, গত ৫ এপ্রিল সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদ থেকে প্রত্যাহার করে রফিকুল ইসলামকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। ওই সময় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (প্রশাসন) জানিয়েছিলেন, রফিকুল ইসলামের বদলি ছিল পুলিশের অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব রদবদলের রুটিন কার্যক্রম।
এর একদিন আগেই গত ৩ এপ্রিল বিকেলে রয়্যাল রিসোর্টে অবরুদ্ধ হন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, ওই রিসোর্টে মামুনুল হকের সঙ্গে যে নারী ছিলেন, তার সঙ্গে মামুনুল হকের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। মামুনুল হক অবশ্য দাবি করেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী।
মামুনুল হক রিসোর্টে অবরুদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ওই রিসোর্টে হামলা করেন। তারা রিসোর্টে ভাঙচুর চালিয়ে সেখান থেকে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান। ওই সময় পুলিশ জানিয়েছিল, রায়টের ভয়ে তারা মামুনুলকে ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’র হাতে তুলে দেয়।
রিসোর্টে হামলার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেও গাড়ি ভাঙচুর চালানো হয় সেদিন। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়সহ স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলারও অভিযোগ ওঠে। একই সঙ্গে অভিযোগ ওঠে, ৩ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ঘটে যাওয়া এতসব হামলার মধ্যেও পুলিশ নির্লিপ্ত ছিল।
এর একদিন পরই প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছিল সোনারগাঁও থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে। এর দুই সপ্তাহের মাথায় তাকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হলো। এর আগে গত বছরের ৫ অক্টোবর সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম।