রূপগঞ্জের সেজান ফুড এন্ড বেভারেজের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ‘লোকদেখানো’ তদন্ত বাদ দিয়ে ‘বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা’র দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
সোমবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের মানবন্ধনে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, সরকারকে বলব, এই লোকদেখানো তদন্ত বাদ দিয়ে বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা নিন। সেজান ফুড ফ্যাক্টরীর মালিক আবুল হাসেমকে জনগণের দাবির মুখে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা বলে তাকে যেন আবার ছেড়ে না দেয়া হয়। সে যেন পার পেয়ে না যায়।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা দায়ী সরকারি ও সেই মালিক কর্তৃপক্ষের সকলকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা মৃত্যুবরণ করেছে, অকারণে প্রাণ দিয়েছে, জ্বলে-পুঁড়ে অঙ্গার হয়েছে সেই সব পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপুরণ দিতে হবে, যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে সুচিকিৎসা, পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণ ও তাদের পুনর্বাসন করতে হবে এবং কলকারাখানা শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
প্রিন্স অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকারের আমলে একের পর এক কলকারখানায় দুর্ঘটনা ঘটছে, অগ্নিকাণ্ড ঘটছে এসব অগ্নিকাণ্ডের পর কিছু হৈচৈ হয়, বিবৃতি হয়, প্রধানমন্ত্রী শোক জানান। তারপরে সব চুপ, সব বেমালুম ভুলে যায়। তদন্ত কমিটি হয়, সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না অদৃশ্য কারণে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস এন্ড বেভারেজের আগুনে পুড়ে শ্রমিক হত্যা এবং দায়ী মালিক ও অবহেলাকারী কর্মকর্তাদের শাস্তি এবং নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপুরণ, আহতদের সুচিকিৎসা-পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণ-পুনর্বাসনের দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। নিহত শ্রমিকদের স্মরণে মানববন্ধনে কালো পতাকা নিয়ে শ্রমিক দলের সদস্যরা অংশ নেন।
প্রিন্স বলেন, আজ রুপগঞ্জে লাশের মিছিল, সেই লাশের মিছিল দেখে কোনো বিবেকবান মানুষ ঠিক থাকতে পারে না। যখন সেখানে আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের মা-বাবা আহাজারি করে, যখন ছেলে আকুতি জানায় যে, আমার মায়ের হাঁড়-গোড় যোগাড় করে দেন তখন বুঝতে হয় কী পরিস্থিতি? আজকের ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে- বাংলাদেশে কাজের কোনো পরিবেশ নাই, শ্রমিকদের কোনো নিরাপত্তা নাই, কর্মপরিবেশ নাই।
তিনি বলেন, সেজান ফ্যাক্টরিতে ৫২ জন শ্রমিক মারা গেলো অথচ রাষ্ট্র, সরকার নিশ্চুপ-নির্বিকার। সরকারের উচিত ছিলো ৫২ জন শ্রমিকের স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিহত-আহতদের সমবেদনা জানানো ও তাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরনের ব্যবস্থা। সরকার সেটা করে নাই। কারণ এই সরকার শ্রমিক বান্ধব সরকার নয়।
কলকারখানার সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন প্রিন্স।
চলমান কডাউনের দিনমজুর, নিম্ন আয় ও প্রান্তিক মানুষের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে প্রিন্স বলেন, এই কঠোর লকডাউনে দেখছি মানুষের হাহাকার, শ্রমিক-কর্মচারিদের হাহাকার, দিনমজুরদের হাহাকার, রিকশা চালকদের হাহাকার। তাদের পেটে ভাত নাই, তাদের হাতে টাকা নাই। এই সরকারের কাছে দাবি করে কোনো লাভ নাই। কারণ তারা লিফ সার্ভিসে ব্যস্ত, মুখের কথায় ব্যস্ত, তারা জনগণের কল্যাণে কোনো কাজ করে না। তাই সরকারকে বলব, অবিলম্বে দিনমজুর, নিম্ন আয়ের মানুষদের ঘরে ঘরে পর্যাপ্ত সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্র্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় মানববন্ধনে দলের শ্রম বিষয়ক সহ সম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা, শ্রমিক দলের সহসভাপতি আবদুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, মহিতুল ইসলাম মোহন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।