চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে ২ হাজার ৬৭ কোটি ২০ লাখ (২০.৬৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ অঙ্ক অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আসা রেমিট্যান্সের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ডলার। ওই অর্থ বছরের পুরো সময়জুড়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে বলেন, ‘এ মহামারীর মধ্যেও বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন প্রবাসীরা। সে জন্য আমি প্রবাসী ভাইবোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
সামনে রোজার ঈদ। এ ঈদকে ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও বেশি করে রেমিট্যান্স আসবে আশাপ্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সবমিলিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ করা পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসে ২০৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ অঙ্ক গত বছর এপ্রিলে আসা রেমিট্যান্সের চেয়ে ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। গত জুলাইয়ে প্রায় ২৬০ কোটি ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এখন পর্যন্ত এক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী আয় পাঠানোর নিয়মকানুন সহজ করা, ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্কারমুখী পদক্ষেপের ফলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স তুলতে ব্যাংকে গিয়ে কাউকে হয়রানি হতে হয় না, রেমিট্যান্স সময়মতো উপকারভোগীর হাতে পৌঁছে যায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৭৪টি দেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। যাদের তিন-চতুর্থাংশ কর্মরত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
করোনা মহামারী শুরুর পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের কর্মীদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমে এলে গত বছরের শেষদিকে অনেক কর্মী আবার বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু দুবাই ও ইতালি থেকে রেমিট্যান্স আসা কমেছে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বেড়েছে মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব থেকে। তা ছাড়া দেশে রেমিট্যান্স আহরণে ব্যাংকগুলোর মধ্যেও প্রতিযোগিতা বেড়েছে। একসময় রেমিট্যান্স আহরণে পিছিয়ে থাকা রূপালী ব্যাংক এখন রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে এক নম্বরে আছে। এ ব্যাংকটির রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে ১২৯ শতাংশ। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় ইসলামী ব্যাংক, ১০২ শতাংশ এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ৬১ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন রেমিট্যান্স প্রেরণকারীর স্বজনরা। এদিকে গত বছর থেকে অনেক ব্যাংক এই ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে আরও ১ শতাংশ যোগ করে মোট ৩ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে রেমিট্যান্স আহরণ বাড়াতে।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামস-উল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কিছুটা খরচ বাড়লেও আমরা ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্সে বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা দিতে চেষ্টা করছি। এটা আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের কষ্টার্জিত অর্থ বৈধপথে দেশে আনতে উৎসাহ জোগাবে।’
এর সুফল দেখা যাচ্ছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহতে। চলতি অর্থবছরের মতো রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। এর আগের অর্থবছরে (২০১৭-১৮) দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। সেই হিসাবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ এখন ভালো রয়েছে।
এদিকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৪ হাজার ৪০০ কোটি (৪৪ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে। গত বুধবার দিন শেষে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৪৮২ কোটি ডলার।