কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছেন প্রায় ১৫৫ জন।
মঙ্গলবার বিকেল ৫ টারদিকে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসিন।
সচিব মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ঘটনায় শুধু ঘরবাড়ি নয় পুড়েছে আইওম ও তুর্কি সরকারের দুইটি বড় হসপিটাল। ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
আন্তর্জাতিক অভিভাবসন সংস্থা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চার শ’জনের অধিক নিখোঁজ রয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে পাঁচ শ নারী-পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছে।
নিহত ১১ জনের মধ্যে উখিয়ার বালুখালীর ৮-ই ক্যাম্পের ১, ৮ ডব্লিউ’র পাঁচ ও ক্যাম্প-৯ এর পাঁচজন। এদের মধ্যে নয়জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ।
তারা হলেন, সলিম উল্লাহ (৫৫), রফিক আলম (২৫), আবদুল্লাহ (৮), আসমাউল (৭), মিজানুর রহমান (৪), বশির আহমদ (৬৫), খতিজা বেগম (৭০), মো. একরাম (৩), এমদাদ উল্লাহ (২৪), তসলিমা (৪), মোশারসা (৩)।
এ ঘটনায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। আজ সকালে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছেন, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত দুই শিশুসহ ৭ জন রোহিঙ্গা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানতাম। তবে বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসিন আরও ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা নিশ্চিত করেন। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে আইএসসিজি এর কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ তাফহিম জানিয়েছে, কুতুপালং বালুখালী ক্যাম্প ভিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তৈরি একটি শিটের হিসাব অনুসারে বালুখালীর ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ৬ হাজার ২৫০ আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন, ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ৬ হাজার ৬১৩টি আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন, ক্যাম্প ৯-এ বাড়ি ৭ হাজার ২০০ টি আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন এবং ক্যাম্প ১০-এ বাড়ি ৬ হাজার ৩২০টি আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন। তিনি উল্লেখ করেন অগ্নিকাণ্ডে এই চারটি ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়স্থল হারিয়ে এক কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে। আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় গ্রামবাসীর বসতভিটাতে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
বালুখালী ৯ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা বশির আহমদ জানান, কাল থেকে জিয়াবুল হক নামে তার ৭ বছর বয়সী নাতিকে খুঁজে পাচ্ছেন না। সকাল থেকে পানি ছাড়া কিছু জোটেনি।
ক্যাম্প-৯ এর সি ব্লকের সি-৫ এর বাসিন্দা মৌলভী মোস্তাক বলেন, আমার দুইটি দোকান এবং একটি ঘর পুড়ে গেছে। দোকানে অন্তত: ২৫ লক্ষ টাকার মালামাল পুড়ে এখন সর্বহারা হয়ে গেছি।
সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পার্শ্ববর্তী অন্য ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে।
সন্ধ্যার আগেই আগুন একে একে ৮ নম্বর ওয়েস্ট ৮, ১০ সর্বশেষ ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এ সময় দমকল বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএন এর সদস্য রেডক্রিসেন্টের টিম ও স্থানীয় গ্রামবাসী যোগ দেয়। রাত ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
তিনি জানান, আগুনে রোহিঙ্গাদের ১০ হাজারেও বেশি ঘর পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধরা হলেও এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এছাড়াও পুড়ে গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।
অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাগোয়া বাংলাদেশি বাসিন্দাদের দুই শতাধিক বাড়ি ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।