চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে । ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের শিয়ালমারা উত্তর মকিমপুর এলাকায় ।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর পিতা জানান, গত ১৫ জুন রাতে আমি আমার মুদিখানার দোকানে ছিলাম, এমন সময় রাত ৯ টার দিকে একই এলাকার পঁচা বিশ্বাসের ছেলে এনামুল হক আমার বাড়িতে ঢুকে আমার ৫ম শ্রেণী পড়ুয়া ১০ বছরের মেয়েকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ও মুখে গামছা ঢুকিয়ে ধর্ষন করে । পরে আমার মেয়ের চিৎকার শুনে আমার স্ত্রী আমাকে ডাক দেয় এবং আমি দোকান থেকে এসে আমার মেয়ের ঘরে ঢুকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করি ও অভিযুক্ত এনামুল হককে আটক করে স্থানীয় লোকজনকে খবর দিই ।
পরে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোকজন এসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ধর্ষনকারী এনামুলকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় । পরদিন সকাল ১০ টায় গ্রামের মড়ল মো: মাইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সালিশ বসে সাদা কাগজে আমার কাছে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় । এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করে । তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি শিবগঞ্জ থানায় ধর্ষন মামলা দায়ের করি । শিবগঞ্জ থানা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে আমার ভুক্তভোগী মেয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন । বর্তমানে অভিযুক্ত ব্যক্তির লোকজন আমাকে মামলা তুলে নিতে ও মীমাংসা করে সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে । এ ঘটনার উপযুক্ত আইনী বিচার কামনা করেন ভুক্তভোগীর পিতা ।
এদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তি এনামুল হকের পরিবারের লোকজন জানান, যাই হোক, একটি ঘটনা ঘটেছে এবং সেটির মীমাংসাও হয়ে গেছিল, কিন্তু পুন:রায় মামলা দায়ের করা তাদের ঠিক হয়নি । বিষয়টি গ্রাম্য সালিশে মীমাংসা করে সমাধানের চেষ্টাকারী মাইনুল মড়ল নামের এক ব্যক্তি বলেন, উভয় পক্ষই আমার কাছে এসে বিষয়টির সমাধান চাইলে আমি গ্রাম্য সালিশের ব্যবস্থা করি । সালিশে অভিযুক্ত ব্যক্তি এনামুল হক ধর্ষনের কথা স্বীকার করে, অতপর তাকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি । তবে ভুক্তভোগী পরিবারের দাবী, তারা গ্রামের কারো নিকট সমাধান চাইতে যাননি, বরং মাইনুল মড়ল, পারুল ও কাজিরুল সহ আরো কয়েকজন মিলে লোক পাঠিয়ে তাদেরকে মীমাংসা করে নেয়ার জন্য বললে ভুক্তভোগীরা তাদের পক্ষের লোকজন প্রস্তুত করার আগেই তাড়াহুড়া করে কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে ।
স্থানীয় সাবেক ওয়ার্ড সদস্য মো: তরিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগীর এক আত্মীয় আমাকে বিষয়টি জানালে আমি তাৎক্ষনিক সেখানে ছুটে আসি । সেখানে উপস্থিত মাইনুল মড়ল এবং পারুল বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে বলে জানালে আমি সেখান থেকে ফিরে আসি ।
স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মুস্তাকিম আলী বলেন, ধর্ষনের বিষয়ে আমাকে কোন পক্ষই অবগত করেনি, তবে ধর্ষনের শুনেছি স্থানীয় কিছু লোকজন মিলে ধর্ষনের বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তা মানামানি না হওয়ায় মামলা হয়েছে এবং আসামী আটক হয়েছে ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার এসআই মুজিবুর রহমান জানান, এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে । আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।