পাঁচ থেকে এগার বছর বয়সী সব শিশুদের জন্য এবার ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা (ভ্যাকসিন) অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন -এফডিএ।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৮০ লাখ তরুণকে দ্রুত কোভিড টিকার আওতায় আনতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এএফপি। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি সম্প্রতি এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা, গুণাগুণ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নিজেদের মতামত জানানোর পর এফডিএ এ সিদ্ধান্ত নিল।
এর আগে চীন, চিলি, কিউবা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যেই শিশুদের জন্য টিকার অনুমোদন দিয়েছে।
এফডিএ প্রধান জেনেট উডকক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘একজন মা ও স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি জানি বাবা-মা, বিদ্যালয়ের কর্মী, শিশু ও শিশুদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা কতটা অধীর আগ্রহে এই ভ্যাকসিন অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারলে আমরা খুব দ্রুত আবার সেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।’
ফাইজার ও সহযোগী বায়োএনটেক ইতোমধ্যে ঘোষনা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কাছে এই মুহূর্তে ৫০ কোটি ভ্যাকসিন রয়েছে শিশুদের টিকাদানের জন্য।
তারা দাবি করছে, সম্প্রতি ২ হাজার লোকের ওপর করা এক পরীক্ষায় তারা প্রমাণ পেয়েছেন ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা সংক্রমনের বিরুদ্ধে ৯০ শতাংশ কার্যকর। ৩ হাজার শিশুর ওপর পরীক্ষাতেও তারা প্রমাণ পেয়েছে, এই ভ্যাকসিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
ফাইজার-বায়োএনটেক জানিয়েছে, প্রথম ডোজ দেওয়ার তিন সপ্তাহ পরে দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ। প্রতিটি ডোজের মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রাম।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক পরিসংখ্যান বলছে, করোনাভাইরাস মহামারীর দাপট শুরু হওয়ার পর ৮ হাজারের বেশি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের বয়স ৫ থেকে ১১ বছর। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৪৬ জন শিশু মারা গেছে।
করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠার পর শিশুদের মধ্যে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোমের (এমআইএস-সি) অস্তিত্ব দেখা গেছে, যা অত্যন্ত বিরল। এতে ৫ হাজার শিশু আক্রান্ত হয়েছে ও ৪৬ জন মারা গেছে।
সিডিসি জানিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দেওয়ার পর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মায়োকার্ডাইটিস এবং পেরিকার্ডাইটিসের জন্য নজরদারি চালিয়ে যাবে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন নিয়ে এফডিএর সভায় কম হৈচৈ হয়নি। একদল বিশেষজ্ঞ পাঁচ থেকে এগার বছর বয়সী শিশুদের টিকাপ্রদানে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, টিকা নেওয়ার পর শিশুদের শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি কেবল তাদের পরিবারের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিস্তৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরপর টিকাদান কর্মসূচি বিস্তৃত করে তা সামাল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশজুড়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে পারলেও উত্তরের তুষারাচ্ছাদিত অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে এখনও পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৫৮ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় আনা গেছে বলে জানিয়েছে সিডিসি।