প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্ব ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশে করোনা মহামারিতে রূপ নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার দিনাজপুরের বেচাগঞ্জে সনকাই উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু মানুষ আছে, যারা সূর্যাস্ত যাওয়ার আগেই বলে দেয় আজকে সূর্য উঠে নাই। ২০২০ সালের মার্চে দেশে যখন করোনা আসলো, তখন বলা হলো বাংলাদেশে দুই কোটি মানুষ করোনায় মারা যাবে। মানে দুই কোটি মানুষ মারা যেতে পারলে মনে হয় সবাই খুশি। যারা বিরোধী রাজনীতি করে, তারা মনে করে দুই কোটি মানুষ মারা গেলে শেখ হাসিনা সরকারকে ফেলে দেওয়া যাবে। শেখ হাসিনা সরকার আর থাকতে পারবেনা। ২০ মণ ঘিও মাখে নাই, রাধাও নাচে নাই-অবস্থাটা হয়ে গেছে এমন। ওদের কল্পনা বাস্তবায়ন হয় নাই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সঠিক একজন নেতৃত্ব ছিল জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। যারা এ ধরনের আশঙ্কা করেছিলো, তাদের সে আশঙ্কা সত্যি হয় নাই সঠিক নেতৃত্বের কারণে। আমাদের দেশ সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সঠিক নেতৃত্বের কারণে।’
তিনি বলেন, ‘এই করোনার মধ্যেও আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করেছি। বাংলাদেশ নিরাপদ ছিল বলেই প্রতিবেশী সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণ বাংলাদেশে এসেছেন। করেনার দেড় বছরে দেশের উন্নয়ন বন্ধ থাকে নাই। উন্নয়ন প্রকল্পের বিদেশি কারিগরি কর্মকর্তারা বাংলাদেশে আসছেন। আমাদের পদ্মাসেতুর কাজ একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। হলি আর্টিজানে ১২ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। তারপরও মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ হয়নি। করোনার মধ্যেও বন্ধ হয় নাই। অলরেডি মেট্রোরেলের ট্রায়াল হয়ে গেছে। করোনার মধ্যে কর্ণফুলী টানেল বন্ধ হয় নাই, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজ চলছে, আমাদের পায়রা, মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরে করোনার মধ্যেও কাজ চলমান আছে। একদিনের জন্যও আমাদের বন্দরগুলো বন্ধ হয় নাই।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির জন্য পৃথিবী প্রস্তুত ছিলনা। সমগ্র পৃথিবী মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়ে যায়নি। অথচ আমরা ছোট একটা দেশ। উন্নয়নশীল দেশ, ধনী দেশ না। কিন্তু করোনাকে সঠিক নেতৃত্বের কারণে, সঠিক ব্যবস্থাপনায় রেখেছিলাম বলেই, যেটাকে মহামারি বলা হয়, সে মহামারি কিন্তু বাংলাদেশে আক্রান্ত হয় নাই। মহামারি আক্রান্ত হয়েছিল স্পেন, ইতালি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে। আমাদের সর্বোচ্চ ৬০০০ আক্রান্ত ও সর্বোচ্চ মৃত্যু ২০০ ছাড়িয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দেশে একদিনে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। একই কবরের মধ্যে শত শত মানুষকে দাফন করতে হয়েছে। বাংলাদেশে কেউ বলতে পারবেনা, একজন সনাতন ধর্মের মানুষকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের এক কবরে একসঙ্গে ১০ জন মানুষকে দাফন করা হয়েছে কেউ বলতে পারবেনা। সম্পূর্ণ ধর্মীয় শিষ্টাচার মেনেই দাফন করা হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ নারী অগ্রগতিতে সারা বিশ্বে অনুকরণীয়। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এজন্য পুরস্কৃতও হয়েছি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর নারীদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছিলো। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নারী জাগরণের মাইলফলক সূচিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদে আগে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলোনা। শেখ হাসিনা বৃহত্তর ওয়ার্ডে নারী প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এটাই ছিল নারী অগ্রগতির ভিত্তি। নারী শিক্ষা, নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির একক কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’
অপর এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আমাদের আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতাকে আঘাত করা হয়েছে। আমাদের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের হৃদয় থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ফেলে দেওয়া যায় নাই। যার প্রমাণ আজকের দেশরত্ন শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘জিয়া, এরশাদ ও খালেদা শুধু ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করেছে। ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করতে তারা রাষ্ট্র ও সরকারকে ব্যবহার করেছে। তারা শুধু আমাদের মাঝে হানাহানি, লুটপাট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ কায়েম করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সেটাকে এগিয়ে নিতে পারে নাই। বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশে নন; সারা পৃথিবীর শতকোটি মানুষের মাঝে অনুকরণীয়।’
এদিন নৌপ্রতিমন্ত্রী উপজেলার বাতাসন দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন, বকুলতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, মোল্লাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন ও হাটরামপুর সার্বজনীন দুর্গামন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছন্দা পাল, নির্বাহী প্রকৌশলী শাহীনুর ইসলাম, বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু সৈয়দ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আফছার আলী, সেতাবগঞ্জ পৌর মেয়র মো. আসলাম প্রমুখ।