প্রতি বছর বিজয়া দশমীর পরবর্তী অমাবস্যা অর্থাৎ কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে পূজিত হন দেবী শ্যামা। এ পূজা দীপাবলী বা ‘দিওয়ালি’ নামেও পরিচিত। ‘দীপাবলী’ বা ‘দিওয়ালি’র অর্থ প্রদীপের সারি। অশুভ শক্তির অন্ধকার ঠেলে মন্দির থেকে ভক্তের গৃহকোণে এ সময় জ¦লে উঠে সহ¯্র প্রদীপ। আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে চারদিক।
বুধবার সেই তিথি। কিন্তু সম্প্রতি দুর্গোৎসব চলাকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটনায় এ বছর উৎসবের আনন্দে চিড় ধরিয়েছে। তাই দীপাবলীতে জ¦লবে না সহস্র প্রদীপ। মুখে কালো কাপড় বেঁধে জানানো হবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদ। শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার প্রতীক দেবী শ্যামার কাছে প্রার্থনা থাকবে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার।
আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপূজা। হিন্দু পুরাণ মতে, দেবী শ্যামা দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মধ্য দিয়ে ভক্তের জীবনে কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে দেবী শ্যামার। অধিকাংশ দেব-দেবীর পূজা দিনে হলেও শ্যামাপূজা হয় রাতে।
সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে গত ২২ অক্টোবর শ্যামাপূজার দিন দীপাবলী উৎসব বর্জনের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। ওই সময় পরিষদের নেতারা বলেন, শ্যামাপূজা গভীর রাতে হয়ে থাকে। এই পূজার সংখ্যা শারদীয় দুর্গাপূজার সংখ্যার চাইতে বেশি হয়ে থাকে। নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট মন্দির কর্তৃপক্ষের ইচ্ছানুযায়ী প্রতিমা বা ঘটে শ্যামাপূজা করা হবে এবং একাধিক দিনের অনুষ্ঠান পরিহার করতে হবে। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোয়া ৬টা পর্যন্ত মুখে কালো কাপড় বেঁধে নিজ নিজ মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির ও মণ্ডপের ফটকে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী স্লোগান ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াও’ সম্বলিত ব্যানার টাঙানোরও সিদ্ধান্ত হয়।
দশ মহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা হচ্ছেন শ্যামা। দেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে নানা পুরাণ ও তন্ত্রে বহু তথ্য আছে। পুরাণে বলা হয়েছে, দেবাসুরের যুদ্ধে পরাজিত দেবগণের স্তুতিতে আদ্যাশক্তি ভগবতীর দেহকোষ থেকে দেবী কৌষিকী আবির্ভূত হন। এ ছাড়া দেবী শ্যামার বিভিন্ন রূপের কথা বলা হয়েছে বঙ্গীয় তন্ত্রসার, শ্যামা রহস্য বিবিধ তন্ত্রে। তার রূপের মধ্যে রয়েছে- দক্ষিণ, সিদ্ধ, ভদ্র, শ্মশান, রক্ষা ও মহাকালী। এই দিন সন্ধ্যায় মৃত নিকটজনদের মঙ্গল কামনায় জলে প্রদীপ ভাসান অনেকে। শ্যামাপূজায় সাধারণত পাঁঠা, ভেড়া বা মহিষ বলি দেয়া হয়।
সনাতনী হিন্দুধর্মীয় মতে, ত্রেতা যুগে ১৪ বছর বনবাস থাকার পর নবমীতে রাবন বধের বিজয় আনন্দ নিয়ে দশমীতে অযোধ্যায় ফিরে আসেন শ্রীরাম। রামের আগমন বার্তা শুনে প্রজাকুল তাদের গৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে আনন্দ উৎসব পালন করেন। এই উৎসবকে দীপাবলী উৎসব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার বৈষ্ণব শাস্ত্রীয় মতে কার্তিক মাস তথা দামোদর মাস। এ মাসেই স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার মাতৃস্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ভক্তির রশিতে ভগবান ভক্তের হাতে বন্দি। এই দামোদর মাস ভগবানের প্রিয় মাস। এ মাসে ভগবানের উদ্দেশ্যে যা কিছু করা হয় তার অক্ষয় ফল প্রদান করেন ভগবান।
গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনাকালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর এলাকায় মণ্ডপে শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।