প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও অন্যান্য কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ভ্যাকসিন প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষতে নির্দেশ দিয়েছেন।
একইসঙ্গে দুই ডোজ ভ্যাকসিন প্রদানের মাঝের যে সময় তা কমিয়ে আনা যায় কিনা সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি এই বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মন্ত্রি পরিষদ সচিব বলেন, সকল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও অন্যান্য কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদেরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিজেও এটা কনফার্ম করেছেন তিনি দেখবেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন শুধু শ্রমিক নয় তাদের পুরো পরিবারকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
টিকার দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান আরো কমিয়ে আনা যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য অনেক দেশে আমাদের দেশের থেকে কম সময়ে সেকেন্ড ডোজ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী টিকার দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা যায় কিনা সে ব্যাপারেও বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে, তার সঙ্গে সচিব ও বিভাগীয় কমিশনাররা দ্বিমত পোষণ করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘তাঁরা বলেছেন, এটি ভুল হয়েছে। গতকাল রোববার এক সভায় উপস্থিত সচিব ও বিভাগীয় কমিশনাররা ওই মত দিয়েছেন। ’
গত বুধবার বরিশালে পোস্টার অপসারণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউএনওর বাসায় হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়। আবার পরে ইউএনও এবং পুলিশের বিরুদ্ধেও পাল্টা নালিশি মামলার আবেদন করা হয়।
হামলার ওই ঘটনার পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন কড়া ভাষায় বিবৃতি দেয় এবং এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গতকাল একটি সভা ছিল। এ নিয়ে যখন কথা হয়, তখন উপস্থিত সচিব ও বিভাগীয় কমিশনাররা ওই বিবৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। এটা উচিত হয়নি। তাঁরা বলেছেন, এটা ভুল হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা তো আমরা ক্লোজলি অবজার্ব করছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে একটা মিস কমিউনিকেশন থেকে এগুলো শুরু হয়। সেটাই ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের সবাইকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও বলে দেয়া হয়েছে, ক্যাবিনেট থেকেও বলে দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা জনপ্রতিনিধি সবাইকে বলা হয়েছে- আপনারা নিয়মিত ইন্টারঅ্যাকশন করবেন। ইন্টারঅ্যাকশন যেখানে কম হয়, সেখানেই এই ধরনের মিস কমিউনিকেশনের বিব্রতকর ঘটনাগুলো ঘটে।’
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘বরিশালের ঘটনা এক্সাক্টলি কী, আমরা জানি না। বলা হয়েছে আপনারা নিজেরা আগে বসেন। বসে দেখেন কী সমাধান করা যায়। আপনারা সমাধান করতে না পারলে, আইন তো আছেই। আপনারা দেখেন এসব ঘটনা কেন ঘটছে?’
প্রতি বছর ১৮ অক্টোবর ‘শেখ রাসেল দিবস’ পালন করবে সরকার। এজন্য এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে দিবসটি পালনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এ সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এই প্রস্তাবটি নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ওনারা শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেইজ নিয়ে এসেছেন। সেখানে ৫ হাজারের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে, তারা গত ১০/১২ বছর ধরে শেখ রাসেল দিবস পালন করছে ১৮ অক্টোবর। শিশু একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এটা পালন করছে। তারা বলেছেন, দেশের শিশুদের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করা হলে এটা ভালো হবে। ক্যাবিনেট সেটা এগ্রি করেছে।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারক (বেতন এবং সুবিধাদি) আইন ২০২১’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন এবং ‘বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারক (ভ্রমন-ভাতা) আইন,২০২১’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি এদিনের মন্ত্রিসভায় ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার এন্ড বার কাউন্সিল (সংশোধনী) আইন ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয় বলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব উল্লেখ করেন। (বাসস)