শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

সওজে’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ

ইসতিয়াক ইসতি:
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ৮ মে, ২০২২
  • ৫৩৭ পাঠক পড়েছে

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায়ধীন সওজ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিন আহাম্মদের দুর্নীতির অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনের বাছাই কমিটি হতে গায়েব করেছেন বলে দাবি করেন মোসলেহউদ্দিন নিজেই। এছাড়াও প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিন বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ গায়েবের পর একের পর এক নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে মোসলেহউদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রথম অভিযোগ জমা পড়ে ২০১৯ সালে। তবে বাছাই কমিটি হতে সেই অভিযোগের কাগজ গায়েব হয়ে যায়। দুদকের কাছে জমা দেওয়া সেই অভিযোগ পত্রে বলা হয়, মোসলেহউদ্দিন আহাম্মদ একজন ক্ষমতাবান কর্মকর্তা। কমিশন ও নিজস্ব পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া তিনি কোনো কাজ প্রদান করেন না। তিনি আরও কিছু দুর্নীতি পরায়ন নির্বাহী প্রকৌশলী ও অফিস কর্মকর্তা দ্বারা নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘কে’ ব্লকের ১১ নং রোডে তার আলীশান ডুপ্লেক্স বাড়ি বাড়ি রয়েছে। বাড়ি নম্বর হচ্ছে ৫০৯। দুই সন্তানকে কানাডায় ও যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করাচ্ছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নামে-বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ও ব্যাংক ব্যালেন্স। মোসলেহউদ্দিন আহাম্মদের ভয়ে আমরা আমাদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখছি। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতি বের হয়ে আসবে। সেই সঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

আজকের সংবাদের হাতে আসা মোসলেহউদ্দিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির একাধিক কাগজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সড়ক বিভাগের বিভিন্ন সার্কেল অফিসে জনবল থাকার পরও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করেন। কাজ নাই মজুরি নাই ভিত্তিতে ৪৭ শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও মহামান্য রাষ্ট্রাপতির এলাকার বাসিন্দা দাবি করে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন দফতরে গায়ের জোরেই নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আজকের সংবাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এমএলএসএস পদে কর্মরত ব্যক্তিদের কাউকে গাড়িচালক পদে নিয়োগ দিয়ে, আবার কাউকে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদায়ন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন চৌকশ এই সরকারি প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিন। আরও দেখা যায়, অধিদফতরের কারখানা সার্কেল শাখায় চাকরিকালীন প্রায় ১৬ ব্যক্তিকে এম আর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সওজ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিন।

এই নিয়োগের মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা। আরও উঠে এসেছে, ওয়াসী উল্লাহ সজীব নামের এক ব্যক্তিকে মোসলেহউদ্দিন সওজ অধিদফতরের ময়মনসিংহ সার্কেলে ওয়েন্ডার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যার বাড়ি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের সাভিনগর গ্রামে। সজীবের নিয়োগের পর ময়মনসিংহ সার্কেলের কারখানা বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান মোসলেহউদ্দিন আহমেদের কাছে একটি চিঠিতে জানান, বর্তমানে ময়মনসিংহ কারখানা সার্কেলে দুটো ওয়েন্ডার পদের মধ্যে দুটোতেই জনবল রয়েছে। ফলে এই পদে আর কোনো জনবলের প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে এই দফতরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাস্টাররোলের কর্মচারী (এমআর) রয়েছে। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে প্রতি মাসে হাজিরা ভিত্তিতে বেতন দেওয়াও দুরূহ হয়ে পড়েছে বলেও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন। এছাড়াও কারখানা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় মোসলেহউদ্দিন কারখানা উপবিভাগের সহকারি স্টোর কিপার পদে সিরাজগঞ্জ সদরের মিরপুর বিড়ালাকুঠি গ্রামের আল আমিনকে ও জরুরি গাড়ির এসি মেরামত কাজের জন্য কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার সাভিয়া নগরের সোহান মিয়াকে প্রধান কার্যালয়ের কারখানা উপবিভাগের সহকারি মেকানিক হিসেবে নিয়োগের জন্য দপ্তরাদেশ এবং কাজ নেই মজুরি নেই ভিত্তিতে তাদের তিন মাসের জন্য নিয়োগ আদেশ দেওয়ার বিষয়টিও আজকের সংবাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। সে সময় অতিরিক্ত জনবল থাকার পরও ঢাকার তেজগাঁওয়ে কারখানা বিভাগে দুই জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলে সেখানকার নির্বাহী প্রকৌশলী গুঞ্জন বড়ুয়া সংক্ষুদ্ধ হয়ে চিঠি লেখেন মোসলেহউদ্দিনকে।

গুঞ্জন বড়ুয়া চিঠিতে লেখেন, ‘অত্র দপ্তর হতে কাজ নাই মজুরি নাই ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগের কোনো চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও দুই জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা সম্পূন ভাবে যুক্তিযুক্ত নয়। আরও উল্লেখ্য করেন, বর্তমানে এ দফতরে সর্বমোট ৪৭ জন কাজ নাই মজুরি নাই ভিত্তিতে কর্মরত আছে। যাদের বেতন প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায় না’। আজকের সংবাদের অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে মাস্টার রোলে নিয়োগ পাওয়া মো. সুমন ও জসীম নামের দুইজন কর্মচারীকে ফেরি প্ল্যানিং সার্কেল থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বদলি করে নিজের বাসার কাজের জন্য নিযুক্ত করেন মোসলেহউদ্দিন। যা চলমান থাকে প্রায় দুই বছর। এসময় তাদের প্রত্যেকের বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা করে সরকারি খাত হতে প্রদান করা হয়। এক কথায় জনবল থাকার পরও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে সরকারি অর্থের অপচয়ও করেছেন মোসলেহউদ্দিন।

বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য সওজে’তে পরিণত হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিন আহাম্মদ এ বিষয় কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেনি। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিন আহাম্মদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলার জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠানের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580