পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত প্রকল্প পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বারবার পরিবর্তনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বাড়ছে প্রকল্পের খরচ ও মানুষের ভোগান্তি। এসব বন্ধ করা উচিত। সেই সঙ্গে কোনো প্রকল্প পরিচালক সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারলে তাকে ডিমোশনসহ শাস্তির আওতায় আনা দরকার। তবে নির্ধারিত সময়ে এবং ভালো কাজ করলে অবশ্যই কর্মকর্তাদের প্রমোশন ও ভালো সুবিধা দেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
সিলেটে একটি অনষ্ঠান শেষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ডুয়েল গেজ রেল যোগাযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দুটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ শুরু না হলে আরও দুর্ঘটনা বাড়বে এবং উন্নয়ন ব্যয় বাড়বে। শনিবার দুপুর ১টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২০-২১ সালে যোগদান করা নার্সিং কর্মকর্তাদের বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ৩৬১ জন নার্সিং কর্মকর্তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন নেওয়া হয়। বাংলাদেশ নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ওসমানী হাসপাতাল শাখার উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনএ ওসমানী শখার সভাপতি শামিমা নাছরিন, পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক। প্রধান বক্তা ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক হিমাংশু লাল রায়, সিলেট মহানগ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং মাইক্রোবায়োলজি ও ভাইরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. ময়নুল হক প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন করোনাকালীন নার্সদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, দেশে পাঁচ হাজার মানুষের জন্য মাত্র একজন নার্স। দুই হাজারের মানুষের জন্য একজন ডাক্তার; যা অত্যন্ত অপ্রতুল। মানুষের প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় ডাক্তার ও নার্স আরও বাড়াতে হবে। বহির্বিশ্বে নার্সদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নার্সদের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। সিলেটের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা প্রকৌশলী আছেন তারা নানা কারণে কালক্ষেপণ করেন, ডিজাইন করেন, ডিপিপি নামে তাদের একটি দারুন জিনিস আছে। টেন্ডার করবেন তারপর আবার সেই ডিপিপি পরিবর্তন করেন। এসব কারণেই প্রকল্পে ধীরগতি। এসব বিষয়ে আরো উৎকর্ষতা অর্জন প্রয়োজন, অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, দেশের কোনো প্রকল্পেই যেন পরিচালক যাকে করা হবে, তাকে পরিবর্তন করা না হয়। পরিবর্তন হলেই দীর্ঘায়িত হয় প্রকল্প, সময় মতো কাজ শেষ হয় না, প্রকল্পের খরচের সঙ্গে বাড়ে মানুষের ভোগান্তি। নতুন পরিচালক এসেই বলবেন, আগের পরিচালক কাজ করেনি আমি কী করব।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, তাদের দেশে এক সময় এমন সমস্যা ছিল। প্রজেক্ট শুরু হলে শেষ হতো না, সময় পেরিয়ে যাওয়ায় খরচ বাড়তে থাকে আমাদের মতো। পরে একজন প্রেসিডেন্ট এসে নিয়ম করলেন প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত একজনই পরিচালক থাকবেন। সময়মতো কাজ শেষ করতে পারলে পদোন্নতি ও ভালো সুবিধা পাবেন; অন্যথায় ডিমোশন ও শাস্তি পাবেন। এ নিয়ম দক্ষিণ কোরিয়ায় ভালো কাজ দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশেও এ নিয়ম চালু করার সময় এসেছে। মানুষকে আর উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে হতাশায় রাখা যাবে না। আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেট নগরীর পূর্ব শাহি ঈদগাহে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ভেঙে বিশাল জায়গা নিয়ে ওসমানী হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সেই জায়গা দখল করে নিতে চাচ্ছে একটি ভূমিখেকো চক্র। সেই চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহায়তাও চান মন্ত্রী।