বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করতে নেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তে আমরা নিঃসন্দেহে খুব হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এভার কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসে হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সিদ্ধান্তে আমরা নিঃসন্দেহে খুব হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। একথা অত্যন্ত সত্য যে একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য ছিল তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। এটা আজকের বিষয় না, ওয়ান ইলাভেন থেকে শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় শুধু তাকে একা নয়, দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও এ ধরনের মামলা নিয়ে আসা হয়েছে।
‘প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে এভাবে মামলা দিয়ে পুরো দলকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত চলছে। সবচেয়ে বড় চক্রান্ত হচ্ছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এজন্য যে তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। ’
তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে খালেদা জিয়া যে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন, চিকিৎসকরাই বলেছেন এই চিকিৎসা যথেষ্ট নয়। কারণ তিনি করোনা পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন। তার যে বয়স এবং অন্য রোগ আছে যার কারণে তিনি যথেষ্ঠ ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা খুব পরিষ্কার এই সরকার ওয়ান ইলাভেনের ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায়। তার ফলই আজ সরকারের এই সিদ্ধান্ত। আমরা মনে করি এই সিদ্ধান্তের কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। কারণ তারা বলেছেন যে নজির নেই, নজিরতো সরকার অসংখ্য সৃষ্টি করেছে। এই সিদ্ধান্তটা শুধু মানবিক কারণেই নয়, রাজনৈতিক কারণও রয়েছে।
‘তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তার যে অবদান সে অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুর্ভাগ্য আজ সরকার প্রতিহিংসামূলক যে রাজনীতি সেই রাজনীতিকে চরিতার্থ করতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ’
তিনি বলেন, যে ধারায় তার সাজা স্থগিত করেছে, সেই ধারাতেই তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া এবং সাজা পুরোপুরি মওকুফ করার যথেষ্ঠ সুযোগ আইনের মধ্যে দেওয়া আছে। তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনের আসামিকে বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারে। মাফ করে দিতে পারে। কিন্তু একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা যিনি এদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে, গণতন্ত্রের জন্যে কাজ করেছেন, তার জন্যে তাদের কোনো মানবতা কাজ করে না। তাদের কোনো শিষ্টাচার কাজ করে না, কোনো মূল্যবোধই কাজ করে না।
খালেদা জিয়া কি রাজনীতির শিকার হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, অবশ্যই, তাতো বটেই। এখনও তিনি রাজনীতির শিকার হয়েইতো আছেন। উনিতো রাজনীতির শিকার হয়ে কারাগারে আছেন, এখনও অন্তরীণই আছেন বলা যায়।
আদালত অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরাতো আবেদন করিনি, আবেদন করেছেন তার পরিবার। পরিবার সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী করবে।
তিনি বলেন, আমি দু’মিনিটের জন্য তাকে দেখলাম। আমার কাছে বেটার মনে হলো। তিনি এখন অক্সিজেন ছাড়াই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। এখনও তার পোস্টকোভিড জটিলতাগুলো আছে। আল্লাহর অশেষ রহমত তিনি এখন ইম্প্রুভমেন্টের দিকে যাচ্ছেন।