রংপুরের হারাগাছে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি’র এএসআই রাহেনুল ইসলাম ওরফে রাজুসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলা দায়েরের চারমাস পর মঙ্গলবার বেলা এগারোটায় পৃথকভাবে রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এবং মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার তদন্তে এএসআই রাহেনুল ইসলাম ওরফে রাজু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনের আওতায় অপরাধ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া একই ধারায় বাকী চারজনেরও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তিনি আরও জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরির্দশক সাইফুল ইসলাম ৪৪ পাতার জুডিশিয়াল নথি ও ৩২৩ পাতার কেস ডকেট তৈরি করে আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে প্রকাশ্য বিচারের জন্য দাখিল করেছেন।
পুলিশ সুপার এবিএম জাকির বলেন, একজন পুলিশের সদস্য হয়ে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া অস্বস্তিকর। আইজিপি ও পিবিআই’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি করেছি। আমরা দেশবাসী ও সমাজকে বলতে চাই সাধারণ মানুষ কিংবা পুলিশ সদস্য অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না। পিবিআই তাদের বিচারের মুখোমুখি করবে।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এএসআই রাহেনুল ইসলাম (৩৫) প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের শিকার দশম শ্রেণির ওই স্কুল ছাত্রীকে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর হারাগাছের কেদারেরপুল এলাকায় আসামি মেঘলার বাসায় নিয়ে যান এবং ধর্ষণ করেন। পরে একই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে মেয়েটিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। এ সময় মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হলে ওই স্কুলছাত্রী রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার মেঘলার বাড়িতে ফিরে যায়। পরে মেঘলা তার বান্ধবী সুরভী আক্তারের সঙ্গে যোগসাজশ করে অপর দুই আসামি বাবুল ও কালামকে ডেকে এনে ৩০০০ টাকার বিনিময়ে পরের দিন সকালে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করায়।
এ ঘটনায় ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা এএসআই রাহেনুলসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হারাগাছ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ওই সময় সারাদেশে আলোচিত হলে পিবিআই স্ব-উদ্যোগে তদন্তভার নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলার আসামি এএসআই রাহেনুল ও মেঘলাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেঘলার সহযোগী সমাপ্তি, ধর্ষক বাবুল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী আসামিদের শনাক্ত করলে রিমান্ডে নিলে আসামিরা ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি দেয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তে নির্যাতিত মেয়েটির মেডিকেল পরীক্ষা করাসহ জব্দকৃত আলামতের ডিএনএও পরীক্ষা করা হয়।