স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে আরও বেশি উজ্জীবিত, উদ্বুদ্ধ এবং কার্যকর করতে স্থানীয় সরকার দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম।
আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি) প্রকল্পের আওতায় ‘স্থানীয় সরকারে নীতি প্রণয়ন ও সংস্কার: সম্পদ আহরণ, কার্যকর সমন্বয় এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার দিবস’ পালন করার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের মধ্যে একদিকে যেমন উৎসাহ তৈরি হবে অন্যদিকে কর্মস্পৃহা এবং দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আরও কার্যকর এবং ক্ষমতায়ন করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজস্ব আদায় ও ব্যয় প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ জনগণকে আরও ভাল সেবা প্রদানপূর্বক জনগণের নিকট দায়বদ্ধ হওয়া দরকার। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ সকল প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদে চূড়ান্ত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে জেলা পরিষদ ছাড়াও পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ আইনও সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু কার্যকর আইন থাকলেই হবে জনগণের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে আইনের দ্বারা প্রাপ্ত ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানান, জনপ্রতিনিধি হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে সেবা দেওয়া। জনগণকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সকলকে সবসময় মানুষের পাশে থাকতে হবে।
মানুষকে সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই আমরা সবাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি উল্লেখ করে মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর সেবা প্রদানের সময় যদি আমি জনগণের পাশে না থেকে পার্টটাইম অথবা অন্য কাজকর্মে ব্যস্ত থাকি তাহলে মানুষকে দেওয়া অঙ্গীকার আমরা রক্ষা করতে পারবো না।
তিনি বলেন, হাইড্রোলজিক্যাল, মর্ফোলজিক্যাল, ফিজিওলজিক্যাল স্ট্যাডি এবং নেভিগেশন সুবিধা না রেখে কোনো সেতু নির্মাণ করা যাবে না। রাস্তা-ব্রিজসহ এলজিইডির সকল কাজ টেকসই করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টেকসই এবং মানসম্মত কাজ করার জন্য ইটের গুণগতমান একটি সমস্যার কারণ ছিল। ইটের মান ঠিক রাখার জন্য সভা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ক্যাবিনেট থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
নিম্নমানের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী জানান, সকল কর্মকান্ড মনিটরিং করার জন্য মন্ত্রণালয় এবং এলজিইডি থেকে টিম গঠন করা হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়মের অভিযোগ আসলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মিস নাটালী শুয়ার্ড এবং ইউএনডিপির ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি মিস ভ্যান ন্যাগুয়েন। কর্মশালায় ইএএলজি প্রকল্প কর্তৃক সম্পাদিত গবেষণার ফলাফল এবং সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড; অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পান্ডে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউএনডিপি’র ফ্রিল্যান্স কনসালটেন্ট মিস. নাহিদ শারমিন।
এছাড়া, কর্মশালায় জাতীয় এবং মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাগণ, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষাবিদ এবং স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি, প্রকল্প কর্মকর্তাবৃন্দ, গণমাধ্যম ও অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।