রাজধানীর সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা আবারও পুরান ঢাকার বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা এলাকায় আন্দোলনে নামেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর অনৈতিকভাবে আলিয়া মাদ্রাসার আল্লামা কাশগরী হলের সীমানার ভেতরে অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণ করতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়।
মাদ্রাসার জায়গা দখল করার অপকৌশল হিসেবে এবং আন্দোলনকারী ছাত্রদের দমাতে হল বন্ধের এমন নাটকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বলেন, অবৈধ ভবন নির্মাণসহ হল বন্ধের হঠকারি সিদ্ধান্ত বাতিল না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। গত দুদিন ধরে তারা টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝামেলা এড়াতে হলের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা হল প্রাঙ্গনে অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণ না করাসহ পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। এর আগে গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে হল বন্ধের ঘোষণা দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জুবায়ের সাংবাদিকদের জানান, আমরা আলিয়া মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষার্থী। কিছু দিন পর আমাদের ডিগ্রি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় প্রশাসন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এবং অবৈধ ভবন নির্মাণের জন্য আমাদেরকে হল ছাড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমরা ভয় ভীতি ও শঙ্কা নিয়ে হলে অবস্থান করছি। তিনি বলেন, বাইরে অসংখ্য পুলিশ দাঁড়ানো। যেকোনো মুহূর্তে অস্থিতিশীল পরিবেশ এবং অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহব্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, অধিদপ্তরের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাদ্রাসার বেশ কয়েকজন শিক্ষক বিরোধীতা করলে তাদের ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে দায়িত্বরত অন্য শিক্ষকদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যে কোন উপায়ে মাদ্রাসার জায়গায় ভবন নির্মাণ করবে বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার নিজস্ব জায়গায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণে শিক্ষার্থীরা বাধা দেওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এমন ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবারও তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, অধিপ্তরের ভবন নির্মাণের হঠকারি সিদ্ধান্ত বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ বিষয়ে আল্লাম কাশগরী হলের হল সুপার ও মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম খান সময়ের আলোকে বলেন, মাদ্রাসা অধিদপ্তর কাশগরী হলের সামনে ভবন নির্মাণ করতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। কোন ধরণের ঝামেলা এড়াতে কর্তৃপক্ষ হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মো. আলমগীর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, আল্লামা কাশগরী হলের সামনে মাদ্রাসা অধিদপ্তর একটি ভবন নির্মাণ করতে চায়। এ জন্য গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে জায়গা পছন্দ করে গেছেন। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন আগে ভবন নির্মাণের সাইনবোর্ড লাগাতে আসলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয় ও মারমুখী আচরণ করে। এ কারণে ঝামেলা এড়াতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।