হাসপাতালগুলোতে এক ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকতে রোগী ভর্তির সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। করোনার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমাদের খামখেয়ালিই দায়ি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের নতুন ১০টি আইসিইউ বেড উদ্বোধন কালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দুই সপ্তাহ আগে ঢাকা মেডিকেলের ২ নম্বর ভবনে করোনা ইউনিটের আইসিইউতে আগুন লেগে ১৪টি বেড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকেই নতুন ১০টি বেড চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অনলাইন মিটিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. জাহিদ মালেক এমপি বলেন, দুর্ঘটনা যেকোনো সময় হতে পারে, তবে হাসপাতালগুলোতে আমরা এই ধরনের দুর্ঘটনা কখনোই কামনা করি না। যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য আমাদের আরো যত্নবান হতে হবে। এজন্য সকল হাসপাতালের পরিচালনায় যারা আছেন তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে করোনার রোগী বাড়ছে। প্রতিদিন ৫ হাজার করে নতুন আক্রান্ত হচ্ছে আর মৃত্যু বাড়ছে। এরকম করে যদি রোগী বাড়তে থাকে আর সবাই হাসপাতালে ভর্তি হতে চায় তাহলে হাসপাতালে জায়গা করা সম্ভব হবেনা। এখনই প্রায় সব হাসপাতাল ভরে গেছে। আমরা প্রতিটি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আরো ১০০ থেকে ২০০ বেড বাড়ানোর ব্যবস্থা করছি। নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা কমিয়ে করোনা রোগীদের জন্য বেশি বেডের ব্যবস্থা করছি।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে একটি মার্কেটকে আমরা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও আইসোলেশন হিসেবে তৈরি করছি। সেখানে ৫০ বেডের আইসিইউ ও ২০০ বেডের এইচডিইউ থাকবে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে সেটি চালু করতে পারবো। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকেও উদ্বুদ্ধ করছি, তারাও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে, কিন্তু তাদেরও সব বেড ভরে যাচ্ছে। তাদেরকেও আরো ১ হাজার করে নতুন বেড করার অনুরোধ করছি। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১ হাজার করে রোগী বাড়লে এক সপ্তাহের কম সময়ে সব হাসপাতালের বেড ভরে যাবে। কাজেই এটি একটি দুর্যোগ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা হাসপাতালে বেড বাড়িয়ে রোগী সংকোলণ করতে পারবোনা, যদি না রোগী উৎপত্তি বন্ধ না করি।
তিনি বলেন, আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে হাসপাতালগুলোতে ১ ইঞ্চি জায়গা ফাকা থাকতেও আমরা রোগী ভর্তি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। অন্যান্য ডিভিশনের হাসপাতালগুলোতে এখনও বেড খালি আছে, তবে রোগী বাড়তে থাকলে সেখানেও সব বেড ভরে যাবে।
তবে আমাদেরকে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রথম ১ বছর আমরা করোনা নিয়ে কাজ করে সক্ষম হয়েছিলাম, নিয়ন্ত্রণে সফলতার কারণে সুনামও এসেছিলো। তবে এখন দ্রুত গতিতে আবার করোনা রোগী বেড়ে যাচ্ছে। গত ৪ মাসে যত না রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ১ সপ্তাহে তার চেয়ে বেড়ে গেছে। শনাক্তর হার ২ শতাংশে কমে আসলেও এখন আবার তা ২০ শতাংশে উঠে গেছে। মৃত্যুও ৫ থেকে ৫০ এ দাঁড়িয়েছে।
আমাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল, আমরা মনে করেছি করোনা দেশ থেকে চলে গেছে। আমাদের খামখেয়ালির জন্যই এখন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার ও দেশকে রক্ষার জন্য এখন আমাদের সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. নাজমুল হক বলেন, দুই সপ্তাহ আগে করোনা ইউনিটে আগুন লেগে সেখানকার আইসিইউর ১৪টি বেড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই ঘটনার পর থেকেই আমাদের চেষ্টা ছিল দ্রুত নতুন ১০টি বেড চালু করা। আমরা খুব দ্রুত সময়েই ঢাকা মেডিকেলের পুরাতন বার্ন ইউনিটে এটি চালু করতে পেরেছি। আজ থেকেই আমরা এখানে রোগী ভর্তি রাখবো। আমাদের হাসপাতালের রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী এটি অতি নগণ্য। তবে আমাদের এখন করোনা ইউনিটের ২০টি আইসিইউ বেড ও ৪০টি এইচডিইউ বেড রয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ডগুলোতেও হাই ফ্লু ন্যাজাল ক্যানুলা ব্যবস্থা করছি।
তিনি বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আইসিইউ ইউনিটটি ঈদের আগেই চালু করতে পারবো। সেই লক্ষে আমাদের কাজ চলছে। আর হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও মনিটরিং করা হয়েছে।