যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে দেশে পৌঁছেছে করোনার ২৪ লাখ ডোজ টিকা। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে মডার্নার ১৩ লাখ ডোজ। এ ছাড়া চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে কেনা টিকার ১১ লাখ ডোজও এসেছে। শুক্রবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসব টিকা পৌঁছায়।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে প্রথমে এসে পৌঁছায় মডার্নার টিকা। বিমানবন্দরে এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য সচিব ও বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে বলছি, আমরা ১৩ লাখ টিকা (মডার্নার) গ্রহণ করলাম। আরও ১২ লাখ ডোজ টিকা সকালে (শনিবার) এসে পৌঁছবে।’ পরে বিমানবন্দরে পৌঁছায় সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা। সংশ্নিষ্টরা জানান, শনিবার দ্বিতীয় চালানে চীনের সিনোফার্মের টিকার আরও ৯ লাখ ডোজ আসবে। সব মিলিয়ে দু’দিনে মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে।
টিকার সংকটে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচিতে ছন্দপতনের কথা তুলে ধরে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা জোরেশোরে শুরুর পরও কাঙ্ক্ষিত টিকা না পাওয়ায় তা ধরে রাখতে পারিনি। আশা করছি টিকার আর কোনো অভাব হবে না। আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাচ্ছি, আগামীতে আরও পাব। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি টিকা আসবে।’
সম্প্রতি কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের এক লাখের বেশি টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। চীন সরকারও উপহার হিসেবে দিয়েছে সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা। এগুলোর মাধ্যমে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া আবার শুরু হয়েছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছিল বাংলাদেশ। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে সেরামের ৫০ লাখ ডোজ করে মোট তিন কোটি টিকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। জানুয়ারিতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ ডোজ টিকা আসে সেখান থেকে। আর ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা পায় বাংলাদেশ। গত মার্চে টিকা রপ্তানি স্থগিত করে ভারত সরকার। এর পরই চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে চীনের সিনোফার্মের টিকা এলো।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, চীনের সিনোফার্মের টিকার দেড় কোটি ডোজ কিনতে চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে দেড় কোটি ডোজ টিকা আসবে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এ ছাড়া টিকার বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের আওতায় চলতি বছরের মধ্যে আরও সাড়ে ছয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে টিকা নিয়ে বাংলাদেশ যে সংকটে পড়েছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে।
কোভ্যাক্সের মাধ্যমে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার সাত কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সরকার। তবে আগামী বছর জুনের পর থেকে ওই টিকা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়ায়ও যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্য সরকারিভাবে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানিকে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে টিকার সম্ভাব্য সবগুলো উৎস খোলা রেখে টিকাদান কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে সরকার।