গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মজিবুল হক বেবু এবং শ্রমিক ইউনিয়নের স্ব-ঘোষিত সভাপতি সাভার থানা সাবেক বিএনপি সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্বাস উদ্দীনের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের চাঁদার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়; এই দুজনের কাছে জিম্মি গাবতলী বাস টার্মিনাল। ঢাকা ১৪ আসনের সাবেক এমপি মৃত আসলামুল হক এর ভাই মফিজুল হক বেবু।
গাবতলিতে শ্রমিকদের থেকে চাঁদাবাজী ও নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে মফিজুল হক বেবু। শ্রমিকদের অর্থ আদায়ের পাশাপাশি প্রায় একযুগ ধরে ফুটপাত থেকে শুরু করে গাবতলী বাস টার্মিনাল, গরুর হাট, বালুঘাট একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চাঁদা আদায় করছে মফিজুল হক বেবু ও তার অন্যতম সহযোগী শ্রমিক ইউনিয়নের স্ব-ঘোষিত সভাপতি সাভার থানার সাবেক বিএনপি সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্বাস উদ্দীন। আজকের সংবাদের অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, বেবু-আব্বাস সিন্ডিকেট চাঁদাবাজিতে সার্বক্ষনিক ভাবে সহযোগী হিসেবে কাজ করে চলেছেন ঢাকা মহানগর যুবদলের ক্রিয়া সম্পাদক শহীদ এবং জসিম নামের আরেক জাতীয় পার্টি নেতা। জানা গেছে, কথিত এ দুই নেতা বিগত ২০০৯ সাল থেকে শ্রমিক ইউনিয়নের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ রশিদের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছেন। পরে আদায়কৃত টাকা অবৈধভাবে আত্মসাত করে কামিয়েছেন প্রায় শতকোটি টাকা।
শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত করে পকেটস্থ করেছেন কোটি কেটি টাকা। শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের টাকার হিসেব চাইলে জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয়। এসময় অসহায় শ্রমিকদের পাশে কেউ এগিয়ে আসেনি বলে জানান শ্রমিকরা। আজকের সংবাদের হাতে আসা তথ্য দেখা যায়, ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের আওতায় প্রতিদিন ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন , কমিউনিটি পুলিশ এবং গাবতলী আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির নামে ৬০ টাকা করে উত্তোলন করা হচ্ছে। যার মাসিক পরিমান দাঁড়ায় ২,১০,০০০ (দুই লাখ দশ হাজার) টাকা। আর বিগত ১৩ বছরে যার পরিমান দাঁড়াচ্ছে আটানব্বই কোটি আটাশ লক্ষ টাকা। মো.আলী আযম নামের একজন শ্রমিকের সাথে কথা হলে তিনি আজকের সংবাদের জানান, শ্রমিক ইউয়নের ও শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকার হিসাব চাইতে গেলে খারাপ আচরণ করে বের করে দেয় হয়।
রিপন মিয়া নামের আরও একজন শ্রমিক নেতার সাথে কথা হলে তিনি আজকের সংবাদ’কে জানান, ২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারিতে অসহায় শ্রমিকরা এই দুই নেতার কাছ থেকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। এবিষয় ঢাকা জেলা যানবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এক অংশের নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি আজকের সংবাদ’কে জানায়, মফিজুল হক বেবু ও আব্বাস উদ্দিন গং প্রতিদিন অসহায় শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে তার পরিমাণ ২,১০,০০০/- (দুই লাখ দশ হাজার) টাকা। অবৈধভাবে প্রতিদিন আরও ২০/২২ লাখ টাকা আদায় করে আসছেন। এই আত্মসাতকারীদের হাত থেকে সাধারণ শ্রমিকরা চাঁদাবাজিমুক্ত বাস টার্মিনাল চায়।
ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি এবং তাদের দাপটে ভয়ে কেউ কোন প্রকার প্রতিবাদ করতে পারে না। তাই শ্রমিকদের একটাই শ্লোগন “হটাও চাঁদাবাজ বাঁচাও শ্রমিক”। এবিষয় ঢাকা জেলা যানবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এক অংশের নির্বাচিত সভাপতি মো. শওকত হোসেন সাথে কথা হলে তিনি দাবি করেন, শ্রমিকরা বেবু-আব্বাস সিন্ডিকের অত্যাচার থেকে মুক্তির পাশাপাশি আদায়কৃত টাকা ফেরত পেতে চায় । তিনি দাবি জানান গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত সাপেক্ষে আত্মসাতকারী বেবু ও আব্বাস গং দের আইনের আওতায় আনা হোক। মো. শওকত হোসেন আরও বলেন আইন অমান্য করে টার্মিনাল দখল করে রেখেছে বেবু-আব্বাস সিন্ডিক।
যার ফলে সাধারণ শ্রমিকদের নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে পারছে না এবং শ্রমিকদের দুর্দশা দূরীকরণে কোনো কাজ করছে না গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মজিবুল হক বেবু এবং শ্রমিক ইউনিয়নের স্ব-ঘোষিত সভাপতি আব্বাস উদ্দীন। আজকের সংবাদের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে, মফিজুল হক বেবুর মিরপুর মাজার রোডে মার্কেট, আবাসিক ভবন- ৬টি, লালকুঠি ও ১ম কলোনীতে ৪/৫টি বাড়ি আছে। এর বাইরে আরো বেনামে অনেক সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া, মিরপুর ১ নং নম্বরে হযরত শাহআলী শপিং কমপ্লেক্সে আব্বাস উদ্দিন এর নামে-বেনামে অনেক দোকান-পাট রয়েছে।
নবীনগর নয়ারহাটে একাধিক বাড়ী, সাভার বিশ মাইলে একটি দশ তলা ভবন, সাভারে একটি বাড়ী, কলেজ গেইট একটি ফ্ল্যাট আছে এবং আনুমানিক ১০ থেকে ১৫টি বাস রয়েছে। গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মজিবুল হক বেবু সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আমি কোনো টাকা উত্তোলন করি না। দরকার হলে আপনি থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন। স্ব-ঘোষিত সভাপতি আব্বাস উদ্দীনের নেতৃত্বে থাকা শ্রমিক ইউনিয়নের মেয়াদকাল চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অবৈধ ভাবে গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদা আদায় করছে আব্বাস উদ্দীনের লোকজন। শ্রমিক ইউনিয়নের স্ব-ঘোষিত সভাপতি আব্বাস উদ্দীনের কয়েক দফার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।