সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগে চলছে বনজ সম্পদ উজাড়ের মহোৎসব

কক্সবাজার থেকে ফিরে আক্তারুজ্জামান:
  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২
  • ৫১৩ পাঠক পড়েছে

আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে চলছে বনজ সম্পদ উজাড়ের মহোৎসব। রাজধানী ঢাকা সহ সকল উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ঈদ খরচার যোগান দিতে দিবারাত্রি চলছে বিভাগাধীন ১০টি রেঞ্জ এলাকা থেকে দেদারছে বৃক্ষ নিধন, ছড়া খাল থেকে বালু উত্তোলন, পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি সহ বনজ সম্পদ উজাড়ের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা অবৈধ উপার্জনের প্রতিযোগিতা। দিবারাত্রি শত শত ট্রাক, পিক আপে অবৈধ কাঠ ভর্তি করে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাচ্ছে।

শতাধিক অবৈধ স’মিল থেকে দিবারাত্রি কাঠ চেরাই হয়ে সাইজ কাঠ পাচার হলেও দেখার কেউ নেই। কাঠ বোঝাই ট্রাক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে বিশেষ টহল দলের ওসি কামরুল হিমশিম খাচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় যেভাবে কাঠ পাচারের মহোৎসব শুরু হয়েছে তাতে করে এই ঈদ মৌসুমেই কয়েকশ কোটি টাকার কাঠ সহ অন্যান্য বনজ সম্পদ উজাড়ের প্রক্রিয়া তরান্নিত হয়েছে। সূত্র মতে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে শত বছরের মাদার ট্রি উজাড়, সংরক্ষিত বন ভূমি জবর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও পাহাড় কেটে ইটভাটায় মাটি ও কাঠ সরবরাহ, ছড়া খাল থেকে বালি উত্তোলন ও স’মিলে গিলে খাচ্ছে কোটি কোটি টাকার কাঠ। এসব অনিয়ম দূর্নীতি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

বন জায়গিদাররা দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অনৈতিক আর্থিক লেনদেন করে বনাঞ্চল ধ্বংসের তান্ডব চালাচ্ছে। মাস শেষে ডিএফও’র পকেটে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কাঠ চোরা কারবারিদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে কথিত “লাইন” (চুক্তি ভিত্তিক চোরাই ভাবে কাঠ পাচারের অঘোষিত অনুমতি) দিয়ে কাঠ পাচারে সহায়তা দিচ্ছে খোদ কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিশেষ টহলদল দলের ইনচার্জ (ওসি) কামরুল হাসান ফরেষ্টার। বান্দরবান পাল্পউড প্ল্যান্টেশন বিভাগ থেকে বদলী হয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগে আসেন তিনি। গত ১০ মার্চ বনবিশেষ টহল দলের ইনচার্জ (ওসি) এর দায়িত্ব নেন কামরুল। ১১ মার্চ থেকে শুরু করেন জেলার কাঠ চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সাথে যোগাযোগ। একটি সুত্র জানিয়েছেন, ওসি কামরুলের সাথে প্রথম বৈঠক হয় শহরের বাজারঘাটায় চিরাই কাঠের চোরাই মার্কেট” আন সাইজ মার্কেট” এ।

আনসাইজ মার্কেটে ২৫ জনের চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীর সাথে প্রকাশ্যে বৈঠকও করেন স্পেশাল টীমের ওসি কামরুল। মাসিক মাসোহারারা টার্গেটও করে দেন তিনি। বাজারঘাটা বিশাল আন সাইজ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, বাজার ঘাটার আন সাইজ মার্কেট নামে পরিচিত চিরাই কাঠের হাটে বিশেষ করে লাশের কফিনের কাঠ বিক্রি করা হয়। এছাড়াও শহরে স্বল্প মুল্যে বিভিন্ন বাসাবাড়ির চিরাই কাঠ সরবরাহ দিয়ে আসছে। কাঠগুলো শতভাগ বৈধ নয় দাবী করে তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলার ব্যক্তি মালিকানাধীন বসত বাড়ীর গাছ ছাড়াও রামু, নাইক্ষ্যংছড়ি, জোয়ারিয়া নালা,কালিরছড়া, ঈদগাঁও’র আশপাশের এলাকার কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা।

এদিকে, টহলদলের ওসি কামরুল দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নাইক্ষ্যংছড়ি, জোয়ারিয়া নালা, কালিরছড়া, খরুলিয়া, বাংলাবাজার, পিএমখালী, ঈদগাহ, ডুলাহাজারা, চকরিয়া ভাঙ্গার মুখ, ঈদগড়ের কাঠ পাচারকারী, বালি ও মাট পাচারকারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তার সাথে চকরিয়া, ঈদগাঁহ, বাইশারি, নাইক্ষংছড়ি, ঈদগড় ও খরুলিয়া এবং বাংলাবাজার স্লুইস এলাকার কাঠ ব্যবসায়ীরাও তার সাথে আগাম যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তিনি ইতোপূর্বে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি ও কস্তুরাঘাটে চাকরি করার কারণে কাঠ ব্যবসায়ীরা তার পূর্বপরিচিত বলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেগপেতে হচ্ছে না। অপর একটি সুত্র জানিয়েছেন, বনবিশেষ টহল দলের ইনচার্জের দায়িত্ব নেওয়ার একমাস হতে চলেছে, কিন্ত কাঠ পাচার রোধে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেননি। তবে কালিরছড়া এলাকা থেকে একটি মাত্র বালুভর্তি ডাম্পার আটক করেন। প্রতি রাতে সড়ক পথে কাঠ পাচার অব্যাহত রয়েছে।এব্যাপারে বনবিশেষ টহল দলের ইনচার্জ ওসি কামরুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, কাঠ পাচার বন্দে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কক্সবাজার সদর, বাঁকখালী, চকরিয়া উপজেলায় অবৈধ ভাবে নির্মিত হয়েছে কয়েশ স’মিল। এসব স’মিলে স্ব স্ব এলাকার সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী দল ডাম্পার (মিনি ট্রাক) জীপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লাখ লাখ টাকার চোরাই কাঠ সরবরাহ করলেও বন বিভাগ এসব কিছু দেখেও না দেখার ভান করছে। ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত হলেও কাঠ পাচারে বিশেষ পারদর্শী। ইতো পূর্বেও যে সকল বন বিভাগে কাজ করেছেন প্রতিটি বন বিভাগেই দূর্ণীতির রেকর্ড সৃষ্টি করলেও গুরুত্বপর্ন এই বন বিভাগের চলতি দায়িত্বে তাকে নিয়োগ দেয়ায় সমগ্র বন বিভাগটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

এ বন বিভাগের কথিত ক্যাশিয়ার বাঁঘখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: সরোয়ার জাহান তার বিশেষ আস্থাভাজন হওয়ায় এই ১০টি রেঞ্জ ও ৪টি চেক স্টেশন থেকে ঈদকে সামনে রেখে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। সন্ধার পর থেকে শুরু করে ভোর রাত পর্যন্ত তিনি তার পাজেরো গাড়ী নিয়ে বিশেষ টহল দলের ইনচার্জ কামরুল হাসানকে সাথে নিয়ে চোরাই কাঠ ভর্তি ট্রাক, পিক-আপ, মিনি ট্রাক আটকিয়ে চাঁদা আদায় অব্যাহত রেখেছেন। এসব ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকারের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।

 

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580