নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে দুটি পৃথক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৩টি শক্তিশালী আইইডি এবং বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম(সিটিটিসি)। এ সময় যাত্রাবাড়ি থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন অরফে ডেভিড কিলার এবং রাতে কেরানীগঞ্জ থেকে কাউসার হোসেন অরফে মেজর ওসামাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তার দুজনের দশ দিন করে রিমান্ড চেয়েছে সিটিটিসি।
সোমবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার দুজন সম্পর্কে সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তারা দুজন বোমা তৈরির কারিগর ও প্রশিক্ষণ। দুজন জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও তারা স্লিপার সেল হিসেবে আমিরের অধীনে কাজ করছিল। দুই বাড়িতে বানানো আইইডি দিয়ে পুলিশের উপর হামলার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান।
রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার আড়াইহাজার উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে তিনটি শক্তিশালী আইইডি বোমা উদ্ধারের পর বিস্ফোরণ ঘটায় এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
এর আগে গত ১৭ মে নারায়নগঞ্জের সাইনবোর্ড সংলগ্ন পুলিশ বক্সে বোমা ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। এই বোমার তদন্ত করতে গিয়ে রোববার বিকেলে ও রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির স্পেশাল একশন গ্রুপ। তাদের দেওয়া তথ্যে রবিবার রাতে নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার ও বন্দর থানায় অভিযান চালিয়ে আইইডি ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় এবং তিনটি আইইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়।
গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন অরফে ডেভিড কিলারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, নারায়নগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে যে বোমাটি রাখা হয়েছিল সেটি তার আস্তানায় তৈরী করে তার এক সহযোগীর মাধ্যমে নারায়নগঞ্জে নিয়ে এসেছিলো।
তিনি জানান, মো. কাউসার হোসেন অরফে মেজর ওসামা জানায় সে দীর্ঘদিন থেকে নব্য জেএমবি’র সামরিক শাখার প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সে উক্ত সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যান্য সদস্যদের সাথে অনলাইনে ও অফলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করে বোমা তৈরীর প্রশিক্ষণ দিত। বাংলাদেশের নব্য জেএমবির আমীর মাহাদী হাসান অরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালী এর সাথে সে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত বলে জানায়।
গ্রেপ্তার জঙ্গিদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আপনারা জানেন ঈদের পর পর গত ১৭ মে তারা পুলিশ বক্সে বোমা রেখে এসেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল এ ধরনের বিস্ফোরকের মাধ্যমে তাদের যে টার্গেট ছিল সেখানে হামলা করা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তাদের অন্যতম টার্গেট।
গ্রেপ্তার একজন হচ্ছে মেজর ও অন্যজন ক্যাপ্টেন। তারা কি সামরিক বাহিনীতে ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা তাদের সাংগঠিক নাম। তাদের সংগঠনের সামরিক শাখা রয়েছে সেটির সদস্য তারা।
এরা কত দিন এক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা গত ১৫ মে একটি হামলার চেষ্টা করেছে। গতকাল তাদের আমরা গ্রেপ্তার করি। গ্রেপ্তারের পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আজকের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করেছি। আবেদন মঞ্জুর হলে এ বিষয়ে তাদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুই জঙ্গিকে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।