রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

মহামারি থেকে মুক্তির মোনাজাত ঈদ জামাতে

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১
  • ২৩৪ পাঠক পড়েছে

করোনাভাইরাস মহামারি থেকে গোটা বিশ্বকে যেন আল্লাহ হেফাজত করেন সেই মোনাজাত হয়েছে দেশের প্রধান ঈদ জামাতে। বুধবার সকাল ৭টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমেরই সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির হিসেবে তার সঙ্গে ছিলেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।

প্রধান জামাতের মোনাজাতে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির পরীক্ষা থেকে আল্লাহ যেন আমাদের হেফাজত করেন। আল্লাহ যেন মুসলিম উম্মাকে তথা দুনিয়াকে হেফাজত করেন, আমরা সেই মোনাজাত করি।’

ঈদুল আজহার দোয়া কামনায় তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ আমরা যেন আপনার হুকুমকে সামনে রেখে সঠিক নিয়মে, সঠিক নিয়তে কোরবানি করতে পারি। এ সুন্দর আমলকে যেন আমরা যথাযথ নিয়মে পালন করতে পারি, আমাদের তৌফিক দান করুন। হে আল্লাহ আপনি রহমতের বরকত দ্বারা ভরপুর করে দিন।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদের জন্য দোয়া করা হয় জামাতে। এরপর দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়।

মৃত স্বজনদের জন্য যখন মোনাজাত ধরলেন, তখন সমবেত মুসল্লিদের চোখে ছিল জল। দু’হাত তুলে মোনাজাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

এ দিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক; তাদের সঙ্গে যোগ দেন সমাজের নানা শ্রেণির-পেশার মানুষ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও প্রথম জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ বাসা থেকে অজু করে আসেন, সঙ্গে নিয়ে আসেন জায়নামাজ। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এক কাতার অন্তর অন্তর দাঁড়িয়েছিলেন তারা। জামাত শেষে কোলাকুলি ও হাত মেলানো থেকে বিরত থেকে মুসল্লিরা ঈদ শুভেচ্ছা সেরে নিয়েছেন হাসিমুখে।

ত্যাগ ও তিতিক্ষার মহান বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদুল আজহা। তবে মহামারিকালে সব আনন্দ-উৎসব এখন ফিকে। বিশেষ দিনগুলোও হয়ে উঠছে না বিশেষ। শহরের অলিগলি ছাড়িয়ে প্রান্তিকের পথে-প্রান্তরে কেবল কান্নার রোল। অকালে স্বজন হারানো মানুষের বিলাপে উৎসবের আঙ্গিনা ছেয়ে গেছে বিষাদের কালো রঙে।

কোরবানির ঈদের খুব কাছাকাছি সময়ে রাজধানীর মগবাজারে ভবন ধসে ১২ জনের মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পর নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ৫২ জন। ওই কারখানা থেকে উদ্ধার করা ৪৯ জনের মরদেহ আগুনে পুড়ে এমনভাবে অঙ্গার হয়েছে যে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ দুই ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা দেশ।

ঈদুল আজহার ঠিক আগের দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে মহামারিকালে বাংলাদেশ হারাল ১৮ হাজার ৩২৫ জনকে। গতবছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর এ পর্যন্ত সারাদেশে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৮৮৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় উল্লম্ফন থামাতে সরকার আরোপ করে কঠোর বিধিনিষেধ, লকডাউন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে সেই বিধিনিষেধ শিথিল করার পর মানুষ ছুটে গেছেন প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে। প্রচণ্ড ভিড়, করোনা সংক্রমণ সবকিছু উপেক্ষা করে এ মহামারিকালে একটুখানি স্বস্তি পেতে পথের ক্লান্তি ভুলে তারা খুঁজে নিয়েছেন পল্লী মায়ের আঁচল।

বিধিনিষেধ শিথিল করায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি। তাদের আশঙ্কা, ঈদের পর সংক্রমণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে দেশের হাসপাতালগুলোতে কোনোভাবেই রোগী ভর্তি নেওয়া যাবে না।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ করোনা মহামারির কঠিন সময়ে কোরবানির মর্মার্থ অনুধাবন করে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে এক ভিডিওবার্তায় দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত ও বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।

এদিকে ঈদুল আজহায় রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে মঙ্গলার ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, চুরি-ডাকাতি রোধে পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটও তৎপর থাকবে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজধানীর কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে।

ঈদের ছুটি শেষ হবে বৃহস্পতিবার। এরপর শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে ফের শুরু হবে কঠোর লকডাউন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে যাওয়া অনেককে তাই একদিনের মধ্যেই ফিরতে হবে কর্মস্থলে।

 

 

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580