(কুষ্টিয়ায় ঘটে যাওয়া ভাস্কর্য হামলার প্রতিবাদে)
পদ্মা, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, কালীনদীর জলে
পাললিক এই মাটি।
ধান, পাট, আখ, সরিষা, ছোলা ও মসুরে
সুফলা মাঠে ঝরে-সবুজ ফসলের হাসি।
গোলা ভরে ওঠে, ভরে ওঠে বুক,গলা খুলে গায় চাষি।
এই মাটির তেজেই ডাক দিয়েছে প্যারীসুন্দরী,
হেঁকেছে তার লাঠিয়াল ; মিলেছে প্রজারা কৃষক-শ্রমিক-হিন্দু-মুসলমান—
এক হয়ে তারা চূর্ণ করেছে দর্প কেনীর,
লুটেছে নীলকুঠি শালঘর-মধুয়ার।
এযে শরৎশশীর অমর পুত্র,বাঘা যতীনের ধাম।
এ জলে হাওয়ায় বেড়েছে একদা সাহসী এ বিপ্লবী ।
ভাঙ্গাতে দেশের শত তরুনের ঘুম,
কাঁপিয়ে বৃটিশ নিয়েছে মৃত্যু,
হয়েছে অমর বুঁড়িবালামের তীর,
শাণিত হয়েছে সশস্ত্র সংগ্রাম।
লাহিনীপাড়ার পথের ধুলোয় উদাসীন পথিক
গদ্যে,নাটকে, উপন্যাসে প্রথম মুসলমান
মনের মরমে ভরে দিয়ে গেছেন ‘বিষাদসিন্ধু’ এক।
দেশে দেশে আজ বিমুগ্ধ বাজে এ মাটির একতারা।
আকুল করে সুরে ও গানে বাউল কবি উদাত্ত নির্ভীক।
আজ লালনের কথা দর্শন মানবিক।
বিশ্বে এখনো পঠিত হচ্ছে রাঁধাবিনোদের পাঠ।
টোকিও ট্রায়ালে অমর তিনি জাপানের ইতিহাস।
অবাক লাগে তিনি আমাদেরই লোক।
বৃষ্টিভেজা পথের ধারে আম কুড়ানো দিনে
মল্লিকাদির নাম ফিরে আসে আবু জাফরের গানে।
কলঙ্ক হয়ে নিন্দার কাঁটা মাথায় মনিহার
পুরো বাংলা মুগ্ধ শ্রোতা পারভিন ফরিদার।
শত লোকের কীর্তি নিয়ে সোনার তরী বয়ে যায় প্রমত্তা পদ্মায়।
হঠাৎ শুনি —-হা রে রে রে
ওরে সোনার তরী লুটছে কারা– পরাণ মাঝি দিচ্ছে হাঁক;
লণ্ঠনটা দে বাড়িয়ে আসুক ধেয়ে আলোর ঝাঁক।
শত হালের জোর ঝাপটে দস্যুরা সব পালিয়ে যাক।
পদ্মাপারের অমর মাঝি হালখানা তোর উচিয়ে ধর।
সোনারতরীর সোনার ফসল বাউল-চাষির ভরুক ঘর।
আয়রে আবার উঠরে জেগে প্যারিবিবির লাঠিয়াল।
সংস্কৃতির সোনার ভুমি নোংরা করছে কোন দালাল?