ঢাকা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে এখন নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন্নাহার পুত্র শামীম ইয়াসার স্পন্দন। জেলা রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিতিতে তার সরকারী চেয়ারে বসেই তিনি অধীনস্থ সাব-রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা কর্মচারীদের ওপর খবরদারি চালিয়ে ঘুষ বাণিজ্য করলেও দেখার কেউ নেই। ডেজিগনেটেড পার্সনের চেয়ারে একমাত্র তাঁর ঊর্ধ্বতন পদের কেউ বসার নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে উপেক্ষিত। জেলা রেজিস্ট্রার বিষয়টি অবগত থাকলেও নিজ পুত্রকে তার সরকারী চেয়ারে বসার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেন না।
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সূত্র মতে জেলা রেজিস্ট্রার পুত্র শুধু তার মায়ের সরকারী চেয়ারেই বসেন না। কমপ্লেক্সের সকল সাব-রেজিষ্টার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকেও নিয়মিত মাসোহারা আদায় করে থাকেন। ঘুষ বাণিজ্যের হিসেব-নিকেশ ও করেন কর্মকর্তাদের সাথে। যা নজিরবিহীন ঘটনা। তার ছেলের অবৈধ ক্ষমতার দাপটে তেজগাঁওস্থ জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসের সকলে অতিষ্ঠ, চাকুরি হারানো ও হয়রানীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না ডি আর এর বিরুদ্ধে। এছাড়া ১৫ আগষ্ট ২০২১ তেজগাঁও রেজিষ্ট্রি কমপ্লেক্স এর অনুষ্ঠান বাবদ তার অধীনস্থ সকল সাব রেজিষ্ট্রারদের কাছ থেকে জন প্রতি ২/৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলেছেন জেলা রেজিষ্ট্রার সাবিকুন্নাহার। যা গোপনে তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে।
এভাবেই অনৈতিক ঘুষ ও দূর্নীতির মাধ্যমে জেলা রেজিষ্ট্রার শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার দেশের বাড়ি ঢাকা জেলার কেরানিগঞ্জ উপজেলায় সাক্ততা গ্রামে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তার অবৈধ সম্পদের খোজ মিলবে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জায়গা বাড়ী ক্রয় করেছেন নামে-বেনামে। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার তার অধীনে থাকা প্রতিটি সাবরেজিষ্ট্রার অফিস থেকে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয় ডি আর কে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিগত সময়ে তিনি সাব রেজিষ্টার হিসেবে চাকরির শুরু হতে তার অনিয়ম দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য পরিণত করেছিলেন। উল্লেখ্য, গুলশান সাব-রেজিষ্ট্র্রি অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় জমির মালিকদের স্বাক্ষর জাল করে রাজউকের কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় যোগসাজশে প্রতারনা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল রেজিষ্ট্রি করেন।
তৎকালীন সাব-রেজিষ্টার সাবিকুন্নাহার বড় ধরনের ঘুষ এর মাধ্যমে দলিল নং ৯১৫০ তাং ০৩-১০-২০১১ তারিখে দলিলটি রেজিস্ট্রি করেন। অনিয়ম জালয়াতির কারনে বনানী মডেল থানায় ৪-১১-২০১৬ তারিখ মামলা হয়। যার মামলা নং ৬। এছাড়া দূর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা গত ২৪ -১২-২০১৮ তারিখে ২৭-০২ নং স্মারকে অভিযোগ হলে দূর্নীতি দমন কমিশন হতে বারবার তথ্য চওয়ার হলে ও ডি আর সাবিকুন্নাহার তথ্য প্রেরণ করেননি কারণ তথ্য দিলে এবং সাটিফাইড কপি সরবরাহ করলে তিনি নিজেই ফেঁসে যাবেন। গত ০৩-১০-১১ তারিখের ৯১৫০ এত নং দলিল দিয়ে মিথ্যা দাতা সাজিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বড় ধরনের ঘুষের বিনিময়ে দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেন।
দূর্নীতি দমন কমিশন আইনে ২০০৪ এবং ১৯ এর ধারায় উল্লেখ্য উল্লেখ আছে কোন কোন কর্মকর্তাকে উপধারা ১ এর অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগে কোন ব্যক্তি বাধা প্রদান করিলে অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে। তার সত্ত্বেও বারবার তথ্য চাওয়ার পর ও ডি আর সাবিকুন্নাহার তথ্য প্রেরণ করেননি। দুদককে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে অবৈধ টাকার প্রভাবে সে সকল অভিযোগের বিষয়ে ধামা চাপা দিয়েছিলেন সেই সময়ে। বিগত ১১-০৩-২০২০ তারিখে মহাপরির্দশক নিবন্ধন এর স্বাক্ষরিত যার স্মারক নং ১০৫(৫৫৮) দেখা যায় বিধিমালা অনুযায়ী একজন কর্মচারী কর্মকাল একই অবস্থানে ৩ বৎসর। মন্ত্রনালয়ে ও মহাপরিদর্শক এক পরিপত্র অনুযায়ী কর্মচারীদের তিন বছরের উর্ধ্বে হলে তাদের বদলি করে মহাপরিদর্শক বরাবর অবগত করতে নির্দেশ দেন। ৩ বছরের উর্ধ্বে থাকতে পারবে না, এবং ৩ বছরের নিচে বদলি করা হলে সে বদলিকে হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের কর্মচারীরা আজকের সংবাদকে জানান আমরা ডি আর এর চাহিদা মাফিক টাকা পয়সা দিতে পারিনি বিধায় আমাদের চাকরী ৩ বছর পূর্ণ না হওয়াতেই বদলি করা হয়েছে হয়রানিমূলকভাবে। অনেক কর্মচারীর তিন বছরের উর্দ্ধে হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে একই অবস্থানে কর্মরত আছেন।
তারা হলেন-আব্দুল মতিন, পিয়ন সদর রেকর্ডরুমে ৭ বছর যাবৎ একই জায়গায় কর্মরত আছেন। তাজুল ইসলাম, পিয়ন, শ্যামপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ৬ বছরের উর্দ্ধে একই জায়গায় কর্মরত আছেন। মোহাম্মদ মহসিন, পিয়ন, কেরানীগঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রি অফিস ৫ বছরের উর্দ্ধে একই জায়গায় কর্মরত আছেন, ইমতিয়াজ আলম লিমন, অফিস সহকারী, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস ৬ বছরের উর্দ্ধে একই জায়গায় কর্মরত আছেন। সামিউল, অফিস সহকারি, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস পল্লবী তিন বছরের উর্দ্ধে, মোশারফ হোসেন, অফিস সহকারি সদর রেকর্ড কিপার তিন বছরের উর্দ্ধে কর্মরত আছে অথচ তাদের বদলি হয় না। কারণ তারা প্রতিমাসে ডি আর সাবিকুন্নাহার কে নাজরানা দেন। আর যে সকল কর্মচারীরা তাকে নাজরানা দিতে পারেন না তাদের কে বদলী চাকরি চ্যুত ও সাময়িক বরখাস্ত হতে হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এতসব বির্তকীত হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান দুর্নীতিবাজ জেলা রেজিষ্ট্রিার সাবিকুন্নাহা’র সিনিয়র দক্ষ অনেক জেলা রেজিষ্ট্রারকে টপকিয়ে মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঢাকার রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লেক্স এ জেলা রেজিষ্ট্রার হিসাবে যোগদান করেন। যোগদান করেই তিনি অলৌকিক কার্যকলাপ শুরু করেন। সে যোগদান করে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সরকারি অফিসের পরিবর্তন করেন। ধোয়া মোছা, রিপিয়ারিং ও আসবাপত্র ক্রয়, এসি লাগানোর এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য সে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এগুলো করেছেন। কারণ সরকারী কোন বরাদ্দ ছিল না উক্ত দপ্তরে। সাবিকুন্নাহার গণ শুনানিতে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বলে বেড়ান যে, সে টাকা-পয়সা নেয় না খায়- না সে নিজেকে ধোয়া তুলছি পাতা বলে পরিচয় দেন অনেকের কাছে বলে সূত্রে জানা যায়।
অথচ জানা যায় যে, সবার চোখ ফাকি দিয়ে বদলী প্রমোশন এর লেনদেন করেন সরাসরি এবং তার ছেলেকে ছাড়াও তার বাসা ধানমন্ডিস্থ গোলাপ ভিলায় ঘুষ লেনদেন করেন। যারা চাহিদা অনুযায়ী টাকা পয়সা দিতে পারেন না, তাদেরকে হয়রানি মূলক বদলী করা হয়। বিভিন্ন অফিসে তার ইচ্ছা মত পিয়ন নিয়োজিত করে রেখেছেন যা সম্পুর্ন বিধি বর্হিভুত ভাবে। যেমন সাভার সাব রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন মোতাহার কর্মরত থাকা অবস্থায় পিয়ন, সুনিলকে প্রেষনে দায়িত্ব দেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। কিন্তু আই জি আর অফিসের পিয়ন বা অফিস সহকারী সাব রেজিস্ট্রিার অফিসে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বিধায় ডি আর চালাকি করে প্রেষনে বদলী করে দেন এবং পল্লবী, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন একই ভাবে নিয়োজিত করেন।
বিধিবর্হিভুত ভাবে প্রেষনে দেন। উত্তরা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন অমল কে এক বছর ৬ মাসের মাথায় বিধিবর্হিভূত ভাবে ঢাকা জেলার বাহিরে পাঠিয়ে দিয়ে, তার অফিসের পিয়নকে লোভনীয় উত্তরা অফিসে প্রেষনে নিয়োগ দেন। তার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তিনি এইসব বিধিবর্হিভূত কাজ করেন। খিলগাও সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কেরানীকে অসৎ উদ্দেশ্য দোহার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে বদলী করেন যোগদানের ১ বছরের মাথায়। জানা যায় যে, খিলগাও সাব রেজিস্ট্রি অফিসে তার পছন্দের লোক বদলী করবেন বিধায় তাকে আগে থেকে সরিয়ে পদটি খালী করেন ডি আর। ভুক্তভোগী কর্মচারীর ডি আর এর কাছে অসহায়ের মত মুখ খুললেই আর বেশী হয়রানি হবে বলে নাম প্রকাশ না করে বলেন, আল্লাহ তার বিচার করবেন। যাকে সে পছন্দ করেন না এবং যে তার চাহিদা মত টাকা পয়সা দিতে পারেন না তাকেই বিধিবহিভুত ভাবে হয়রানি করেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগের বিষয়ে ডি আর সাবিকুন্নাহারের মোবাইলে ফোন দিলে ফোন রিসিভ না করাতে তার কোন মতামত পাওয়া যায়নি।