২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। এদিন ছিনতাই করা চারটি যাত্রীবাহী বিমান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। ধ্বংস হয় পাশের আরেকটি ছোট ভবনও। হামলার শিকার হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। প্রাণ হারায় প্রায় তিন হাজার মানুষ। ভয়াবহ ওই হামলার ২০তম বার্ষিকী আজ।
সেদিন ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল ভর্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজ আঘাতে হেনেছিলো নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ১৯ জঙ্গি চারটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে এই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি জায়গায়।
ওই হামলা পুরো বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে। আর ওই হামলার জবাব দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে। হামলার জন্য আল কায়েদাকে দায়ী করে দলটির নেতা ওসামা বিন লাদেনের ঘাঁটি আফগানিস্তানে হামলা চালায় ওয়াশিংটন। ক্ষমতাচ্যুত করা হয় লাদেনের মিত্র তৎকালীন তালেবান সরকারকে। তবে গত ২০ বছরে পরিবর্তন এসেছে সেই দৃশ্যপটেও। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ২০তম বার্ষিকীর কয়েকদিন আগেই আফগানিস্তান ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে আবারও কাবুলের কুরসি ছিনিয়ে নেয় তালেবান।
এমন পরিস্থিতিতেই এবার ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ২০তম বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিন বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় নিহতদের স্মরণ করবে পুরো জাতি। সাজানো হয়েছে নিউ ইয়র্কে ওই ঘটনায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ।
নিহতদের স্মরণে আলোকসজ্জার আয়োজন করেছে নিউ ইয়র্কের ৯/১১ মেমোরিয়াল অ্যান্ড মিউজিয়াম। স্থানীয় সময় শনিবার সূর্যাস্তের সময় ব্যাটারি পার্কিং গ্যারেজের ছাদ থেকে টুইন টাওয়ারের আদলে সাত হাজার ওয়াটের ৮৮টি বাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, মেট্রোপলিটন অপেরা, লিঙ্কন সেন্টার প্লাজা এবং নিউ ইয়র্ক হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটিসহ নিউ ইয়র্কের সুউচ্চ ভবনগুলোর ছাদে আলোকসজ্জা করা হবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এবারের বার্ষিকীতে সেদিন আক্রান্ত তিন স্থানের সবকটি পরিদর্শনে যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফার্স্ট লেডি জো বাইডেনও তার সঙ্গে থাকবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং তার স্বামী ডগলাস এমহফ পেনসিলভানিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক পৃথক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখান থেকে পরে তারা পেন্টাগনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মিলিত হবেন।
এদিকে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলা বা ৯/১১ হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্ট নথিপত্র প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হামলায় ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর এ ঘোষণা দেন তিনি।
বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমি ৯/১১ হামলার নথি প্রকাশের বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। হামলার ২০তম বার্ষিকী সামনে রেখে সেই অঙ্গীকারকে সম্মান জানাচ্ছি। এ হামলা সম্পর্কে মার্কিন সরকার যা জানে তার পুরোটা জানার অধিকার আমেরিকান জনগণের আছে।
এদিন এফবিআই তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে হামলার স্থান, যেখানে টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেই ‘গ্রাউন্ড জিরো’র ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে সময় লেগেছিল আট মাসেরও বেশি। ওই জায়গায় এখন তৈরি হয়েছে জাদুঘর, সঙ্গে স্মৃতিসৌধও।
সূত্র : রয়টার্স, নিউ ইয়র্ক টাইমস