শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ঝুমন দাসের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত পরিবার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১
  • ২৪৪ পাঠক পড়েছে

জামিনে মুক্তি পেয়ে প্রিয় সন্তান সৌম্যকে নিয়ে বাড়িতেই ব্যস্ত ঝুমন দাস। তবে তার নিরাপত্তা ও সংসার চালানো নিয়ে চিন্তিত তার মা। তিনি ছেলের নিরাপত্তার সঙ্গে সংসার পরিচালনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ঝুমন দাস জানিয়েছেন, যে তিনটি অভিযোগে তিনি সাড়ে ছয় মাসের অধিক সময় জেল খেটেছেন সেই অপরাধ তিনি করেননি।

জানা গেছে, ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের সাবেক নেতা কারাবন্দি মামুনুল হকের সমালোচনার অভিযোগে গত ১৬ মার্চ গ্রেফতার হন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার দুর্গম নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাস। সাড়ে ছয় মাসের অধিক সময় জেল খেটে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরেছেন মায়ের কোলে। দাড়াইন ও ভান্ডাবিল হাওরঘেরা তার গ্রামটিতে গত ১৭ মার্চ তাণ্ডব চালিয়েছিল হেফাজতের অনুসারীরা। সেই আতঙ্ক কাটেনি ঝুমনের পরিবারের। ঝুমন কারামুক্ত হওয়ায় পরিবার আনন্দিত হলেও তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

ঝুমন দাস বলেন, আমি যখন জেলে তখনও ১৫-১৬টি ফেসবুক আইডি আমার নামে সচল ছিল। আমি জেলে থাকার পর কীভাবে আমার নামের এই আইডিগুলো সচল থাকে? যে পোস্টের কারণে আমার নামে মামলা হয়েছে সেরকম কোনো পোস্ট আমি দেইনি। মামলায় তিনটি পোস্টের কথা উল্লেখ আছে। সত্যিকার অর্থে সর্বশেষ যে পোস্টটি সেটা আমি দিয়েছি। সে পোস্টে মামুনুল হকের সমালোচনা করা হয়েছে। বাকি যে দুটি পোস্ট অশ্লীল কথা লিখে দেওয়া হয়েছে সেগুলো আমি দেইনি। কেউ আমার প্রোফাইলের স্ক্রিনশট নিয়ে এডিট করে আমার নামে চালিয়ে দিয়েছে।

এদিকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সংসার চালানো নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন ঝুমন। কারণ তিনিই পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ বিষয়ে ঝুমন দাস বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে আমি সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট মৌলভীবাজারের রাজনগর, শমসেরনগর, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও ধর্মপাশায় মার্কেটিংয়ের কাজ করেছি। স্কয়ারে কাজ করেছি। এভাবেই আমার পরিবারের খরচ চালিয়েছি। চলতি বছরের প্রথম দিকে আমার ভাই ব্যবসা করার জন্য কিছু টাকা দেন। সেই টাকায় ব্যবসা শুরু করার পরই এই ঘটনা। আমি জেলে থাকায় আমার পরিবার অনেক ঋণ করেছে। এখন আমার কিছু করতে হবে। বুঝতে পারছি না কি করব?

ঝুমনের মা নিভা রানী দাস ছেলেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি গত দুদিন ধরে চোখে চোখে রাখছেন ঝুমনকে। চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না। সন্তানের নিরাপত্তার সঙ্গে পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও তিনি উদ্বিগ্ন।

নিভা রানী দাস বলেন, এখন আমার ছেলে ঝুমন জেল থেকে বের হয়ে বাড়িতে আসছে। আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ঝুমন। এতোদিন সে জেলে থাকায় ধার করে পরিবার চালিয়েছি। আগে সে মার্কেটিংয়ে চাকরি করে পরিবারের খরচ চালিয়েছে। এখন আমার পরিবার চলবে কীভাবে, খাব কী সেই চিন্তাই করছি। আমার পুরো পরিবার এখন নিরুপায় অবস্থায়।

ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস বলেন, মিথ্যা অভিযোগে আমার স্বামী জেল খেটেছেন। তিনি জেল খাটার মতো কোনো অপরাধ করেননি। এই মামলা থেকে স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি চান তিনি।

এদিকে ১৭ মার্চের হামলার কথা ভুলতে পারেননি এলাকাবাসী। তারা শত বছর ধরে যেভাবে শান্তি ও সম্প্রীতি নিয়ে অবস্থান করতেন সেই ধারাবাহিকতায় গ্রামে শান্তিতে বসবাস করতে চান। একই সঙ্গে যারা তাদের গ্রামে হামলা করেছিল তাদের বিচার দাবি করেন গ্রামবাসী।

নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা চন্দন দাস বলেন, আমরা শত বছর ধরে শান্তি সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছি। আমাদের বাপ-দাদারা এখানে বসবাস করেছেন মিলেমিশে। কোনোদিন এ রকম ঘটনা হয়নি। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী গুজব ছড়িয়ে আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। আমরা এর বিচার চাই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে। আমরা মামলা করেছিলাম। মামলার সব আসামি জামিনে বের হয়ে এসেছে। আমার বয়স অনেক হয়েছে। আর কতদিন বাঁচব জানি না। মৃত্যুর আগে হামলাকারীদের শাস্তি দেখে যেতে চাই।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ নোয়াগাঁও গ্রাম ও ঝুমনের নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন আছে।

 

 

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580