শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

আজ মহালয়া : দেবীপক্ষের শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১
  • ১৯২ পাঠক পড়েছে

পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু হচ্ছে আজ বুধবার। আজ মহালয়া। চণ্ডীপাঠ, মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে মহালয়া। মহালয়া মানেই দুর্গাপূজার দিন গোনা শুরু হয়ে যাওয়া। মহালয়ার ভোরবেলা থেকেই শুরু হবে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা। সনাতন ধর্মে বলা হয় পিতৃপক্ষে প্রয়াত আত্মারা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আসেন। মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন অনেকে। পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জল-তিল-অন্ন উৎসর্গ করে তর্পণ করা হয়।

সনাতন ধর্মে বলা হয়, দেবীপক্ষকে বলা হয় সবচেয়ে শুভ দিন। এ সময় সব ধরনের শুভ কাজ সম্পন্ন করা যায়। এই দিনে দেব-দেবীকুল দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। মহালয়ার দিন ভোরে মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন জানানো হয়।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর সোমবার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী এবং ১৫ অক্টোবর দশমী।

এদিকে প্রতিমার কাঠামোতে মাটির কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। রঙের কাজও হয়েছে অনেকটা। হাত, গলা, কপালের ভাঁজগুলো ফুটিয়ে তোলার মতো সূক্ষ্ম কাজগুলো এখন করছেন প্রতিমা কারিগররা। তুলির আঁচড়ে চোখ ফুটিয়ে তোলার কাজটিও করছেন খুব সতর্কভাবে। দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশের পাশাপাশি অসুরের দিকেও সমান গুরুত্ব করিগরদের। শুধু কি তাই? দেব-দেবী কিংবা অসুরের বাহন সিংহ, হাঁস, পেঁচা, ময়ূর, ইঁদুর, সাপ, মহিষও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই রং-তুলি হাতে কারিগররা এ কাজগুলো করছেন নিবিষ্ট মনে। কারিগররা জানান, এ কাজটি মূলত সব কারিগর করতে পারেন না। দক্ষ কর্মীরাই করে থাকেন। প্রতিমার মাথায় চুল লাগানোর কাজটাও চলছে অনেক মণ্ডপে। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতী বাজার, বাংলাবাজার জমিদার বাড়ি, রমনা কালী মন্দির ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। প্রতিমার পুরোপুরি অবয়ব ফুটে উঠতে আরো দুই-তিন দিন সময় লাগবে। ৮ কি ৯ অক্টোবরের মধ্যেই শেষ হবে প্রতিমা তৈরির কাজ। তখন পূর্ণ রূপে দেখা মিলবে দেবী দুর্গার। ১১ অক্টোবর থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে সপরিবারে অধিষ্ঠান করবেন দেবী দুর্গা। শুরু হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব।

জমিদারবাড়িতে কাজ করছেন তপন পাল ও বলাই পাল। আর শাঁখারীবাজারে বিভিন্ন অস্থায়ী মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন সুজন পাল ও মুকুন্দ পাল। তারা জানান, রথের পর থেকে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রতিমার ক্যাটালগ দেখে আয়োজকরা তাদের বায়না করেন। সেই অনুযায়ী চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। দুর্গা প্রতিমার পাশাপাশি গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রতিমাকে গড়ে তুলতে হয় দৃষ্টিনন্দন করে। অসুরসহ তাদের বাহনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সব মিলিয়েই পরিপূর্ণ হয় একটি প্রতিমা সেট। পুরো সেট একা কোনো কারিগরের পক্ষে গড়া সম্ভব নয়। কাঠামোতে বেনা বাঁধা (খড় দিয়ে কাঠামো), প্রতিমার চোখ, হাতের আঙুল, মুখমণ্ডল তৈরিসহ প্রতিটি কাজের জন্য আছে ভিন্ন কারিগর। পাঁচ-ছয়জন মিলে এক সেট প্রতিমা বানাতে সময় লাগে ১৫ দিন।

মহালয়ার পর থেকে শুরু হবে অস্থায়ী মণ্ডপ নির্মাণের কাজ। তখন ব্যস্ততা বাড়বে ডেকোরেটর কারিগরদের। তবে বেশি ব্যস্ত আয়োজকরা। কারিগরদের চাহিদামতো রসদ জোগাতে এবং পূজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করাতেই ব্যস্ত থাকেন তারা। পূজার প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহে ঢাকার বাইরে থেকে আয়োজকরা ভিড় করছেন শাঁখারীবাজারের বিভিন্ন দোকানে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সংবাদ সম্মেলন : এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সেখানে সারাদেশে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি ও ২০২০ সালে ৩০ হাজার ২১৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর চলতি বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা। গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯০৫টি। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা হবে ২৩৮টি, যা গত বছরের চেয়ে চারটি বেশি। এ বছর প্রধানমন্ত্রী দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন, যা গতবারের চেয়ে ১ কোটি টাকা বেশি। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে উৎসবসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে ভক্তদের প্রতি অনুরোধ করে পূজা উদযাপন পরিষদ। এছাড়া মেলা, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি প্রতিযোগিতা বন্ধ এবং বিজয়া দশমীর দিন (১৫ অক্টোবর) শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার নির্দেশ রয়েছে বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে পূজার সংখ্যা বেড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আস্থা, সরকারি অনুদান ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

প্রতিমা ভাঙচুর ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ : প্রতি বছরই দুর্গাপূজার আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ বছরও দুর্গাপূজার প্রাক্কালে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর, চাঁদপুরের কচুয়া, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

এ প্রসঙ্গে নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি নিলেও সা¤প্রদায়িক শক্তি নানা অজুহাতে নানাভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মিথ্যা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু স¤প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। সব ক্ষেত্রেই দলীয় আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অনেকেই এসব সংঘবদ্ধ আক্রমণে সামিল হচ্ছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে মাথা নত করলে একসময় এরা রাষ্ট্রের মৌলিক অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আমরা কেউ চাইব না, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ সরকার অপশক্তির কাছে মাথা নত করবে।

সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। এর ফল হচ্ছে ছত্রভঙ্গ। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। মহালয়া উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দির ও পূজা কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। ভোর থেকেই শুরু হবে চণ্ডীপাঠ, চণ্ডীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580