রাজধানীর মিরপুরের গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গৃহকর্মী খাদিজাকে নিয়ে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আ. হালিম মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিবকে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক বছর আগে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কি না এবং সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় কি জবাব দিয়েছে। এগুলো আমাদেরকে আজ পর্যন্ত জানানো হয়নি। এর আগে কমিশনে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছি। সুপারিশ বাস্তবায়নে কমিশনের হাইকোর্টে আসার সুযোগ রয়েছে। তারা হাইকোর্টেও মামলা করছে না। এক বছর ধরে খাদিজার পরিবার একটা আশার মধ্যে আছে। মানবাধিকার কমিশন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এ কারণে মানবাধিকার কমিশনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। ১৫ দিনের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে মানবাধিকার কমিশনের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে বলেও জানান আইনজীবী।
এর আগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি সুপারিশ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মিরপুর থানা পুলিশ গৃহকর্মী খাদিজাকে সুরক্ষা দিতে না পারায় এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের শুনানিতে খাদিজার নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় এই সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে তিন মাসের মধ্যে উপযুক্ত সুপারিশ বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়।
মানবাধিকার কমিশন তার আদেশে বলে, মিরপুর থানা মামলা না নিয়ে খাদিজার আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
এদিকে ওইদিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘কমিশনের কাছে ভিকটিম খাদিজা বক্তব্য দেওয়ার সময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচার চেয়েছে। ঘটনার সময় ভিকটিম খাদিজা মা হারা একজন অনাথ শিশু হিসেবে যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বর্তমানেও নির্যাতনের সেই ক্ষত তার মনে দাগ কেটে আছে। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
গত বছরের ২৩ জুন মিরপুরের গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও সংস্থাটিকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেছেন। রায়ে বলা হয়, মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মতো মারাত্নক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে পরিষ্কার যে মানবাধিকার কমিশন তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ/সচেতন নয় এবং দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনে প্রতিকার দিতে মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় কমিশন চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং কমিশন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে।
২০১৩ সালে রাজধানীর মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।