পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় চাঁদাবাজি করত একটি গ্রুপ। বেশির ভাগ সময় ব্যবসায়ী ও নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের টার্গেট করে তারা চাঁদাবাজি করছিল। তাদের দাবি করা চাঁদা না পেলে ভুক্তভোগীদের দেওয়া হতো হুমকি। পাশাপাশি সেই প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করে লুটে নিত সবকিছু।
গত ১৩ অক্টোবর এই চক্রের সদস্যরা শ্যামলী এলাকার মোটরসাইকেলের শো-রুম ‘ইডেন অটোস’ এ ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে টাকা ও কিছু দামি জিনিস লুট করে। পরবর্তীতে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২ পৃথক অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতে চক্রটির মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। গ্রেপ্তাররা হলেন, ডাকাত চক্রের মূলহোতা জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন, জাহিদুল ইসলাম শিকদার, খায়রুল ভূঁইয়া, রাকিব হাসান এবং নয়ন।
র্যাবের দাবি, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বসিলা, শ্যামলী এলাকায় আস্তানা গেড়ে বিভিন্ন অপকর্ম করছিল তারা। এসব এলাকার বিভিন্ন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের টার্গেট করে চাঁদাবাজি করছিল। চাঁদার টাকা না পেলে ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখাতো। এরপরও কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে তারা বাসাবাড়ি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক চুরি, ছিনতাইয়ের মামলাও রয়েছে।
কমান্ডার মঈন বলেন, ১২ অক্টোবর উত্তরা মটরস এর ডিলার ইডেন আটো’স নামের শো-রুমে একটি ডাকাত দল প্রবেশ করে ম্যানেজার ওয়াদুদ সজীব এবং মটর টেকনিশিয়ান নুরনবী হাসানকে ধারালো চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় ডাকাত দলের কিছু সদস্য শো-রুমের দোতলায় উঠে গ্লাস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং ক্যাশ ড্রয়ার ভাংচুর করে। তারা ক্যাশ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা এবং ডেস্কটপ কম্পিউটারের মনিটর নিয়ে পালিয়ে যায়। এর আগে থেকে তারা প্রতিষ্ঠানটির মালিককে বিভিন্ন সন্ত্রাসীর নামে হুমকি ও চাঁদা দাবি করছিল। ডাকাতির ঘটনার পর র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। গতরাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়ন্দা শাখা ও র্যাব-২ ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এবং ধামরাই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি ও নগদ এক লাখ ৯৩ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা মোহাম্মদপুর কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য। তাদের দলে ৮-১০ জন রয়েছে। মোহাম্মদপুর, বসিলা, শ্যামলী এবং আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ভাঙিয়ে কয়েক বছর ধরে চাঁদাবাজি করছিল তারা। এছাড়াও তারা মাদক ও চোরাই অটোরিকশা ব্যবসা, চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
চাঁদা না দেওয়ায় ডাকাতি
শ্যামলীর মোটরসাইকেল শো-রুমে চাঁদা না পেয়ে সেখানে ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। ১১ অক্টোবর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় জসিমের বাড়িতে বসে জহির, জাহিদ, নয়ন, খায়রুল এবং রাকিব একত্রিত হয়ে শ্যামলী ইডেন অটো শো-রুমে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। ওইদিন সন্ধ্যায় শো-রুমটি রেকি করে। জসিম ও জহির ঢাকা উদ্যান কাঁচাবাজার থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি কেনে। পরের দিন আবারও শো-রুমের সামনে যায় এবং ভেতরে প্রবেশ করে চাপাতি দিয়ে দুজনকে জখম করে। অন্যরা শো-রুমে ভাঙচুর করে। ৫-৬ মিনিটে ডাকাতি শেষ করে তারা পালিয়ে যায়।