আশীষ কুমার দে: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বহরে থাকা ড্রেজারগুলোর মাস্টার ও ড্রাইভারসহ অন্য কর্মচারিরা দীর্ঘদিন যাবত নিরাপদ পানির চরম সংকটে রয়েছেন। এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ সারা বছর দুটি জাহাজে করে বিভিন্ন স্থানে থাকা ড্রেজারগুলোতে পানি সরবরাহ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে ড্রেজারের শ্রমিক-কর্মচারিরা বাধ্য হয়েই নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করছেন এবং চর্মরোগ ও পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্য দিকে, পাউবোর ড্রেজারের শ্রমিক-কর্মচারিরা পানি পান না। তারাও একইভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেনভ নৌশ্রমিক সংগঠনগুলো অবিলম্বে ভাসমান শ্রমিকদের পানিসমস্যা সমাধানের জোর দাবি জানিয়েছে। আর বিশেষজ্ঞমহলসহ নৌখাতের উন্নয়নে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন বলছে, নৌশ্রমিকদের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের নৌযানেই ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (পানি শোধনাগার) স্থাপন’ বাধ্যতামূলক করা উচিত। অভ্যন্তরীণ নৌখাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সেবা সংস্থা বিআইডব্লিউটিএর বহরে বর্তমানে ৪৫টি ড্রেজার আছে এবং আগামী বছরের মধ্যে আরো ৩৫টি ড্রেজার যুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সব মিলে সংস্থাটির বহরে ড্রেজারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮০। প্রতিটি ড্রেজারের সঙ্গে একটি করে হাউজবোট (কর্মচারিদের থাকা-খাওয়ার ভাসমান ঘর) ছাড়াও অন্যান্য সহায়ক জলযান ও যন্ত্রপাতি থাকে। সারা বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে নদী খনন ও পলি অপসারণের কাজে এসব ড্রেজার নিয়োজিত থাকে। কোনো কোনো এলাকায় টানা তিন-চার মাসও অবস্থান করতে হয়। বিআইডব্লিউটিএর একাধিক ভুক্তভোগী শ্রমিক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, নদীর পানি বিশুদ্ধ না হওয়ায় তা যেমন খাওয়া যায় না, তেমনি অনেক নদীর পানি এতোটাই দূষিত যে, তা ব্যবহারেরও অযোগ্য। আবার বাইরে থেকে বোতলজাত পানি কিনে নিয়মিত খাওয়া ও ব্যবহারের আর্থিক সামর্থ্যও তাদের নেই। ওই শ্রমিকরা আরো বলেন, বিআইডব্লিউটিএ দুটি জাহাজে করে সারা বছর বিভিন্ন ড্রেজারের হাউজবোটে পানি সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু তার পরিমাণ এতো কম যে, চাহিদার ২৫ শতাংশও পূরণ হওয়া। ফলে বাধ্য হয়েই এসব জলযানের শ্রমিক ও কর্মচারিরা নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ড্রেজারসহ সব ধরনের ভাসমান জলযানের শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান হারা। নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, জাহাজ তথা যেকোনো নৌযানে কর্মরত শ্রমিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্ব মালিকপক্ষের। এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিতে তা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সরকারি কিংবা বেসরকারি জাহাজে শ্রমিকরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সব ধরনের ভাসমান নৌযান শ্রমিকদের পানিসমস্যা সমাধানের জোর দাবি জানান শ্রমিক নেতা সৈয়দ শাহাদাৎ। নদী ও নৌখাতসহ পরিবহনখাতের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, নৌশ্রমিকরা বাঁচলে নৌখাত বাঁচবে। তাই নৌশ্রমিকদের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে। তবে শুধু বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজারের শ্রমিক-কর্মচারিদের নয়, সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের নৌযানে পানিসংকট তীব্র। এই সংকট নিরসনের জন্য সব ধরনের নৌযানেই ‘পানি শোধনাগার স্থাপন’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান হাজী শহীদ মিয়া। এ বিষয়ে দুষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রস্তাবটি খুবই ভালো এবং বিবেচনার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবো। এছাড়া কীভাবে জাহাজে পানি সমস্যার সমাধান করা যায় তার পথও খোঁজা হচ্ছে।