পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগে ফরেস্টার নির্মল কুমার কুন্ডুর নেতৃত্বে চলছে হরিলুট। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজন হবার সুবাদে এই ফরেস্টার দুটি রেঞ্জ ও ১টি স্টেশনের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থেকে বন উজাড়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করলেও দেখার কেউ নেই। দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই ফরেস্টারকে দু’ধাপ উপরের রেঞ্জার পদের শীর্ষক রেঞ্জ ও পাবলাখালী রেঞ্জর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও মাইনিমুখ চেক স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কয়েকজন দক্ষ ফরেস্টারকে কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ফেলে রাখা হলেও শুধুমাত্র ডিএফও’র আপনজন হবার সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ এই ৩টি দায়িত্বে অধিষ্ঠিত রাখার বিষয়টি সমগ্র বন বিভাগে কর্মরতদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায়, এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন এই গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকায় তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে চলছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় প্রক্রিয়া। ভুয়া জোত পারমিটের নামে টিপি ইস্যু করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার কাঠ পাচার অব্যাহত রাখলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি ওভার লুক করে আসছেন। ফরেস্টার নির্মল কুমার কুন্ডু রেঞ্জ অফিসার হিসেবে শীর্ষক রেঞ্জ ও পাবলাখালী রেঞ্জ থেকে প্রতিদিনই শতাধিক টিপি ইস্যু করে মোটা অঙ্কের অর্থ অবৈধ আয় করে আসছেন। পাশাপাশি মাইনিমুখ চেক স্টেশনে ভুয়া জোট পারমিটের অনুবলে ইস্যুকৃত টিপি মূলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে আহরিত অবৈধ কাঠ বোঝাই ট্রাক থেকে চেকিং এর নামেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কাঠ পাচারে সহযোগিতা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চেক স্টেশনে প্রতি কাঠ বোঝাই ট্রাকের জন্য ৮ হাজার করে টাকা আদায় করা হয়। এই টাকা না দিলে ফরেষ্টার নির্মল ট্রাকে বোঝাই কাঠের সাথে টিপিতে বর্ণিত কাঠের মিল নেই বলে কাঠ ও ট্রাক জব্দ করার হুমকি দেন। তাই ট্রাকে পরিবাহিত ট্রাকের মালিককে বাধ্য হয়েই ফরেস্টার নির্মলের দাবীকৃত টাকার চাহিদা পূরণ করতে হয়। আদায়কৃত অর্থের অর্ধেক ফরেস্টার নির্মল পেয়ে থাকেন। বাকি অর্ধেক সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ তার অধীনস্থদের মধ্যে বন্টন হয়। পাবলাখালী ও শীর্ষক রেঞ্জ থেকে যে সব জোত পারমিট ইস্যু হয় তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও ভুয়া।
ইস্যুকৃত জোত পারমিটের ভূমির অবস্থানে নিরপেক্ষ তদন্ত করলে গাছের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। কারণ জোতের যেখানে গাছ দেখানো হয় প্রকৃত অর্থে সেখানে গাছ থাকে না। ইস্যুকৃত পারমিটের বর্ণিত গাছ সরকারি বন ও বিভিন্ন লোকের বাড়ি হতে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যা বনজ দ্রব্য পরিবহন নীতিমালার পরিপন্থী। জোত পারমিটের অনুবলে যে চলাচল পাস (টিপি) ইস্যু করা হয় ঐ সব টিপি’র সাথে ট্রাকে বোঝাই কাঠের জোত মাপ ও পরিমাপ মিলানো হলে বেশিরভাগ কাঠের টুকরার সাথে ট্রাকে বোঝাই কাঠের জোত মাপ ও পরিমাপের গড়মিল পাওয়া যাবে। এসব অবৈধ কাজ প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার নির্মল ও তার সহযোগীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কাঠ পাচার ও চুরিতে সিদ্ধহস্ত নির্মল দীর্ঘ চাকুরী জীবনে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করে যশোরের চৌগাছায় বিলাসবহুল বাড়ি, স্ত্রী ও আপনজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে মোটা অংকের টাকা জমা, ভারতের বারাসাতের চাঁপাঢালির মোড়ে বিলাসবহুল বাড়ি ও কয়েকটি দোকান ক্রয় করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
এতদসংক্রান্তে ফরেষ্টার নির্মলের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি জানান দীর্ঘ ৩ বছর নাগাদ তিনি এই দায়িত্বে অধিষ্ঠিত আছেন। তার চাকরি আছে মাত্র দেড় বছর। কর্তৃপক্ষ তাকে সরিয়ে দিলেও কোন যায় আসেনা। তবে সংশ্লিষ্ট ডিএফও’র নাম্বারে বিষয়টি জানতে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি পর্যবেক্ষক মহলের মতে দুর্নীতিবাজ এই ফরেষ্টারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।