‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের যে সাফল্য আমরা তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। জলবায়ু সম্মেলনে গিয়ে আমি এটাও বলে এসেছি, আমরা নিজেরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে চাই। ভ্যাকসিন তৈরিতে যে বাধা আছে, সেগুলো আপনাদের সরিয়ে দিতে হবে। এটা উন্মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের প্রাপ্য। এটা জনগণের সম্পদ হিসেবে দিতে হবে। যেন সারাবিশ্বের কোনো মানুষ এই ভ্যাকসিন থেকে দূরে না থাকতে পারে। আমাদের সুযোগ দিলে আমরাও ভ্যাকসিন উৎপাদন করবো। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। সেজন্য আমি জমিও কিনে রেখেছি। আমরা কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ প্রবর্তন করায় এর ওপর আনীত প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সোমবার (১৫ নভেম্বর) তিনি এ কথা বলেন। এর আগে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এ প্রস্তাব আনেন। প্রস্তাবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সংসদের অভিমত এই যে, জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান-বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ প্রবর্তন করায় জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ হতে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানানো হোক।’
এর আগে, সংসদে এর ওপর অনেক এমপি-মন্ত্রী আলোচনা করেন। বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদেরও বক্তব্য দেন। বিএনপির সংসদ সদস্য (এমপি) হারুনুর রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর অবদান অল্প সময়ে বলে শেষ করা যাবে না। আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ভোটে দিলে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহতদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন। আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। পৃথিবীর কোনো দেশ স্বাধীনতার পর এত অল্প সময়ে এত স্বীকৃতি আদায় করতে পারেনি, যেটা বাংলাদেশ পেরেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের ছিল বলেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, এ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক মুক্তির জন্য, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য, স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি যখন অর্থনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা দিলেন, দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।এই হত্যাকাণ্ড শুধু রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু বা শেখ মুজিবকে না বরং, আমাদের পরিবার ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকেও হত্যা করা হলো।’
তিনি বলেন, ‘ওদের মনে হয় একটাই চিন্তা ছিল। জাতির পিতাকে পরিবারসহ হত্যা করলে বাংলাদেশ যে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিল, বিজয়ী জাতি হিসেবে যেভাবে মাথা তুলে বিশ্ব দরবারে চলছিল, সেই জায়গাটা নষ্ট করা। স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশের ঘরে না পৌঁছায়, স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ হয়, ওই বিজয় যেন ব্যর্থ হয়, এটাই বোধহয় প্রচেষ্টা ছিল। যেটা আমরা দেখেছি ২১ বছর। সেভাবেই দেশ পরিচালনা করা হয়েছে। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষের যে উন্নয়ন করা যায় সেটা আজ আমরা প্রমাণ করেছি, প্রমাণ করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাত ধীরে ধীরে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন এবং আমাদের সংবিধানে অর্থনৈতিক নীতিমালায় সেটা বলা আছে। সেই সঙ্গে তিনি সেই যুগেই আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের চিন্তা করেছিলেন। আমাদের ফসল দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়াতে হবে। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। তিনি সবসময় বলতেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চেয়েছিলেন- বাংলাদেশ যেনো আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। পঁচাত্তরের পরে আমরা দেখেছি, হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর অফিসার, বিমান বাহিনীর অফিসার, সৈনিক, সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের প্রেক্ষাপটের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে দেখেছি বিজ্ঞান কেউ পড়ে না। বিজ্ঞানের ক্লাস হয় না। বিজ্ঞানের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। গবেষণা তো ছিলই না। এর জন্য বিশেষ বরাদ্দ ছিল না।’ ৯৬ সালে আ’লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পিছিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু এখন আর পিছিয়ে নেই। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ জনগণকে। আমাদের তারা বারবার ভোট দিয়েছেন। সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। এই এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে এখন আর বাংলাদেশের কাউকে বাইরে গিয়ে কথা শুনতে হয় না। ভালো কাজটা কেউ চোখে না দেখলে আমাদের কিছু বলার নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইয়াং বাংলা স্টার্টআপ শুরু করেছি এবং এর জন্য কিছু বরাদ্দ দিয়েছে। আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ আমাদের কিছু ইয়াং সংসদ সদস্য সবাই কিন্তু এই প্রোগ্রাম নিয়েছে।’ অনলাইনের অভূতপূর্ব বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস একদিনে তো হয় না, ধাপে ধাপে করতে হয়।’