স্টাফ রিপোর্টার : বিদেশে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আজ সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) দারুণভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন যে চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। এমনকি যে হাসপাতালে তিনি ছিলেন, সেখানেও সম্ভব হয় নাই। প্রয়োজনে সুচিকিৎসার জন্য তার বাইরে যাওয়া হয়তো দরকার হবে।এই ব্যাপারে সরকারেরে একটা নিষেধাজ্ঞা আছে আপনারা জানেন।’ নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, ‘আমরা দাবি জানাব, এই ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা সেটা প্রত্যাহার করা হোক এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক যেন তিনি তার চিকিতসার প্রয়োজনে যখন যেখানে যেতে চান তিনি যেতে পারেন।’
সরকারের আরোচিত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যদিও এই নিষেধাজ্ঞাটা অমানবিক ও অযৌক্তিক। কারণ এদেশের ইতিহাস বলে যে, অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। এমনকি জেলে থাকা অবস্থাও বাইরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে।কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এ্ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে।’
নজরুল আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই অযৈাক্তিক ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বারবার বিরোধীদলীয় নেত্রী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ। তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে যে, কখন কোথায় চিকিতসার জন্য যেতে চান। এবং যেটাই প্রয়োজন হবে সেটা যাতে বিঘ্নিত না হয় সরকারের উচিত সেটা নিশ্চিত করা।’ সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে নজরুল বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। এ্টা রাজনৈতিক বিষয় না, এটা তার চিকিৎসার বিষয়।’
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশের দ্বিতীয় দফা মেয়াদেও শেষ প্রান্তে পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির চাওয়া প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার আর কি আমরা তো বরাবর, বারবার আমরা বলেছি- আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, তাকে সাজাই দেওয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে, বিনা অপরাধে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত যারা, তাদেরকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে সেটা আপনারাও জানেন। কারণ এটা খালেদা জিয়ার জন্য প্রযোজ্য নয়। তিনি সরকারের আপনজন না, প্রতিপক্ষ। যদি সরকার তার প্রতি যে আচরণ করছে যেটা প্রতিপক্ষের না, শত্রুর আচরণ।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার সকলের সরকার হওয়া উচিত। যেটা প্রমাণ করার জন্য হলেও অবিলম্বে তাকে নিশঃর্ত মুক্তি দেয়া এবং তিনি যাতে স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারেন, সুচিকিতসা নিতে পারেন এবং নাগরিক হিসেবে তার যে অধিকার সেই অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।’ খালেদা জিয়া বর্তমানে কেমন আছে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই ব্যাপারে তার যারা চিকিৎসক টিম এবং তাঁর আত্বীয়স্বজনদের বক্তব্য আপনারা বিভিন্ন সময়ে জানছেন এবং প্রকাশও করছেন। এর বাইরে তো বলার কিছু নাই। কারণ আমরা তো তার সাথে দেখাই করতে পারি না। আমরা আপনাদের মতো যতটুকু জানি তিনি দারুনভাবে অসুস্থ। তাঁর সুচিকিতসা প্রয়োজন।’
খালেদা জিয়ার সুচিকিতসার ব্যত্যয় হলে বুঝা যাবে সরকার তার সুচিকিতসা চান না বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একজন অসুস্থ মানুষ সুচিকিতসা না পেলে যেটা হতে পারে সেটা সরকারের বিবেচনায় নেয়া দরকার। জনগন সেটা বোঝে।’ গত ২০ ফেব্রুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ভার্চুয়াল এই বৈঠকে সিঙ্গাপুর চিকিতসাধীন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ খন্দকার মোশারররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুক্ত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্প্রতি নড়াইলের আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, বরিশালে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগদানে নেতা-কর্মীদের বাঁধা প্রদান এবং সিলটের সিটি মেয়র আরিকুর হক চৌধুরীসহ তার সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। একইসঙ্গে বগুড়ায় ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি দলীয় সাংসদ ও জেলার আহবায়ক জিএম সিরাজসহ নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারি দলের হামলা এবং নোয়াখালীর বসিরহাটে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত সাংবাদিক মোজাক্কির বোরহান উদ্দিন মারা যাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাস স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়ার পর থেকে গুলশানে নিজের বাসা ‘ফিরোজায়’ বাস করছেন তিনি। প্রথম দফার পর পরিবারের আবেদনের আরো ৬ মাস সাজা মওকুফ করা হয় যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ২৪ মার্চ।