ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনে ইন্টারপোলের সাবেক প্রধান মেং হংওয়েই-কে সাড়ে ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ ইউয়ান জরিমানা করেছেন চীনের একটি আদালত। তবে মেংয়ের স্ত্রী গ্রেস মেং, যিনি এখন রাজনৈতিক আশ্রয়ে ফ্রান্সে বসবাস করছেন, তিনি জানান, তার স্বামীর বিরুদ্ধে চীন সরকার যে অভিযোগ তুলেছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সম্প্রতি বার্তাসংস্থা এপি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার তিনি এসব দাবি করেছেন।
এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মেং কারাগারে যাওয়ার পর চীনা শাসকরা তাকে তার সন্তানসহ অপহরণ করতে চেয়েছিল। এতদিন নিজের ও সন্তানদের কথা বিবেচনা করে তিনি চুপ থাকলেও শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চীনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন। ফলে আগে যখন তিনি সাক্ষাৎকার দিতেন, তখন নিজের চেহারা ক্যামেরায় না দেখানোর শর্ত দিলেও এখন প্রকাশ্যে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তিনি।
গ্রেস মেং এপিকে জানান, সবশেষে ২০১৮ সালে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে মেংয়ের সঙ্গে তার কথা হয়। এরপর থেকে তিনি জানেন না কারাগারে তার স্বামী কেমন আছেন? কারণ, নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় চীনে যেতে পারছেন না। আর একাধিকবার আইনজীবী মারফত খবর নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘আমার জমজ দুই সন্তান জানে না ওদের বাবা বেঁচে আছে কিনা। ওরা বাবাকে ভীষণ মিস করে।’
২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স থেকে চীনে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন ইন্টারপোলের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেং। নিখোঁজের কয়েকদিন পর তাকে আটকে করা হয়েছে বলে জানায় চীন। ইন্টারপোলের প্রেসিডেন্ট পদে মেং ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। কিন্তু আটকের কয়েকদিন পরে ইন্টারপোল জানায়, মেং নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পর তার পদত্যাগপত্র পেয়েছে। এ বিষয়ে মেংয়ের স্ত্রী এপিকে বলেন, ইন্টারপোলের মতো বড় আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও তার স্বামী সংস্থাটি থেকে কোন ধরনের সহায়তা পাননি। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আটক একজন ব্যক্তি কীভাবে পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন? তাকে অবশ্যই জোরপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছিল।’
মেং এর মামলা ও কারাভোগের বিষয়ে গ্রেস বলে, ‘এটি একটি মিথ্যা মামলা। যা রাজনৈতিক মতবিরোধের জেরে করা হয়েছে। কারণ চীন বিরুদ্ধ মত সহ্য করতে পারে না। ’ গ্রেস আরও বলেন, ‘আজ চীনে দুর্নীতির মাত্রা লাগামহীন। এ বিষয়ে সবাই একমত। কিন্তু দুর্নীতি কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে দুটি ভিন্ন মত রয়েছে। একটি হলো-এখন যে পদ্ধতি বহাল তবিয়তে টিকে আছে, তা লোপ করা। অন্যটি হলো-সাংবিধানিক গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়া।’