জয়ের জন্য শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিলো ৮ রান। এমন পরিস্থিতিতে কাকে দিয়ে বল করাবেন মাহমুদউল্লাহ? এমন যখন ভাবনায় তখন বল হাতে নিজেই আসলো টাইগার অধিনায়ক। শুরুর দুই বলেই তুলে নিলেন দুই অভিজ্ঞ পাকিস্তানি ব্যাটার সরফরাজ ও হায়দার আলীকে। অবশ্য হ্যাটট্রিক বলে খেয়ে বসলেন ছক্কা। কিন্তু পরের বলেই তুলে নিলেন আরেকটি উইকেট। তখনও জয়ের সম্ভাবনায় ফিফটি ফিফটি। কিন্তু শেষ বলে বিতর্ক আর বহুল নাটক শেষে বাউন্ডারি খেলো মাহমুদউল্লাহ। একটি সম্ভাবনাময় জয়ের সমাপ্ত হলো হতাশায়। ঘরের মাঠে আগের দুই ম্যাচ হারের পর এবারের রোমাঞ্চকর ৫ উইকেটের হারে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপ সহ গেলো এক মাসে টানা আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০৭-২০১০ পর্যন্ত দীর্ঘতম টানা ১২ ম্যাচ হেরেছিলো টাইগাররা। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০১৬-১৭ সালে টানা আটটি ম্যাচ হেরেছিলো টাইগাররা। আজ পাকিস্তানের কাছে হেরে হারের যৌথভাবে নিজেদের লজ্জার রেকর্ডটা আরেকবার গড়ল মাহমুদউল্লাহ বাহিনী।
আজ রবিবার দুপুর মিরপুর শেরে-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ম্যাচে ছোট সংগ্রহ গড়ার পর শেষ ওভারের উত্তেজনায় হারে বাংলাদেশ। আর তাতেই আরও একটি লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন টাইগাররা। টি-টোয়েন্টিতে ঘরের মাঠে একাধিক ম্যাচের সিরিজে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল টাইগাররা। এদিন হারের বৃত্ত ভেঙে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে এদিনও ব্যর্থ ছিলো ওপেনিং। ১ উইকেট হারালেও পাওয়ার প্লেতে তুলতে পেরেছিল টাইগাররা মাত্র ৩৩ রান।
বাংলাদেশের ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে আসা শান্ত পাকিস্তানের হয়ে অভিষিক্ত দাহানির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন। গত ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার শান্তর ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৫ রান। পরে ওপরের দিকে ব্যাট করতে আসা শামিম হোসেন করেন ২৩ বলে ২২ রান। মাঝে আফিফ ২১ বলে করেন ২০ রান। আর ১৮ ওভারে ফেরা নাঈম ৫০ বলে ৪৭ রান। দলীয় সর্বোচ্চ স্কোরারও তিনি। শেষের দিকে দ্রুত উইকেট পড়ায় রানের চাকা ততটা সচল থাকেনি। শেষ পর্যন্ত দল থামে ১২৪ রানে। পাকিস্তানের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন উসমান কাদির এবং মোহাম্মদ ওয়াসিম। একটি করে উইকেট নিয়েছেন শাহনেওয়াজ দাহানি ও হারিস রউফ।
জবাবে ভালো শুরু পায়নি পাকিস্তানও। ১২৪ রানের ছোট লক্ষ্যে নেমে টাইগার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ধীর শুরু করে বাবর-রিজওয়ান। এদিনও পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটি ভালো করতে পারেননি। বিপরীতে আমিনুলের বলে বাবর ফিরলে চাপে পড়ে পাকিস্তান। তবে তৃতীয় উইকেটে পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটিতে হারের শঙ্কা কমিয়ে দেন রিজওয়ান-হায়দার। ভয়ংকর হয়ে ওঠা রিজওয়ানকে ফেরালেও জয়ের পথেই থাকে পাকিস্তান।
সবটাই ঠিক ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে আসলো না শেষটা। জয়-পরাজয় নির্ধারণের ওভারে মাহমুদউল্লাহ বল করতে এসে তুলে নেন তিন পাকিস্তানি ব্যাটারকে। দারুণ শুরুতে আশা জাগান জয়ের। হ্যাটট্রিক বলে অবশ্য ছক্কা হজম করতে হয়েছে টাইগার অধিনায়ককে। তবে পরের বলেই আবার ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু জয়ের জন্য ২ রান প্রয়োজনে শেষ বলে চার মেরে দেন বাঁহাতি ব্যাটার নওয়াজ। নাটকীয় শেষ ওভারেই আবারও হতাশ হয় বাংলাদেশ। স্নায়ুচাপের খেলায় সফরকারী পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত জয়ে মাঠ ছাড়ে। আর বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ হয় ঘরের মাঠে।
সফরে দুটি টেস্ট খেলবে পাকিস্তান। আগামী ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের রওনা করবে দুদল। সেখানে ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর অনুশীলন শেষ করে আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম টেস্ট। ডিসেম্বরের ১ তারিখে ঢাকায় ফিরবে দুদল। মিরপুরে ২ ও ৩ ডিসেম্বর অনুশীলন শেষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি শুরু হবে ৪ ডিসেম্বর।